বাংলাদেশের সর্বপ্রথম কৃত্রিম পায়ে হাটা-চলা ক্ষমতা সম্পন্ন ও বাংলাভাষী হিউম্যানিয়েড রোবট ‘রোবট-লি’ উদ্ভাবন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল তরুণ উদ্ভাবক। ৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘ফ্রাইডে ল্যাব’ নামক একদল স্বপ্ন বাজ তরুণ চলাচলের ক্ষমতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এই রোবট তৈরি করে।
গত ২০ এপ্রিল ঘরোয়াভাবে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হলেও সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে লি উদ্ভাবনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
লি দেখতে অনেকটা মানুষের মতো। শুধু দেখতেই নয়, সে মানুষের মত দুই পায়ে হাঁটতে পারে, বাংলা ভাষা বুঝতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এমনকি মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে। লি মানুষের সঙ্গে করমর্দন করে, স্যালুট দেয় এবং নাচতেও পারে। এছাড়াও তার চোখ, চোখের পাতা এবং ঠোঁট দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে পারে। লিয়ের উচ্চতা ৪ ফুট ১” ইঞ্চি এবং ওজন ৩০ কেজি।
শাবি শিক্ষার্থীদের লি রোবট তৈরির দলের নাম ফ্রাইডে ল্যাব। এ ল্যাবের দলের দলনেতা ও প্রোগ্রামারের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের সাবেক ছাত্র এবং নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নওশাদ সজীব।
নকশাকারের দায়িত্বে ছিলেন স্থাপত্য বিভাগে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান, ইলেক্ট্রনিপের দায়িত্বে ছিলেন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিপ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম, মেকানিক্যালের দায়িত্বে ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সামিউল হাসান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বে ছিলেন একই বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থী জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি।
ফ্রাইডে ল্যাব দলনেতা নওশাদ সজীব জানান, আইসিটি ডিভিশনের ইনভেশন ফান্ডের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে রোবটটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ৩ বছর। এই দলের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ দলের ৫জন সদস্য ছাড়াও গত ৩ বছরে এ রোবট তৈরিতে আরও অনেকেই কাজ করেছে। তারা হলেন সাজিদ, শান্ত, খাইরুল, শোভন, সোহান, জান্নাতসহ আরও অনেকে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে রোবটকে মানুষের বাসা বাড়ি এবং অফিসের বিভিন্ন কাজে দেখা যাবে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার গতিকে আরও বেগবান করতে এবং বাংলাদেশ যে বিশ্বের সঙ্গে প্রযুক্তিতে অবদান রাখতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এ রোবটটি তৈরি। আমরা বাংলাদেশে বসেই বাইরের বিশ্বের মত রোবট তৈরি করতে পারি।
সোমবার পরিচিতি পর্বে জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার অনুকরণে লি জানায়, ‘আমি লি। /আবার আসিয়াছি ফিরে/রোবট হয়ে এই বাংলায়।’ লি আরও বলেছে, সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
রোবট লি এর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন সোর্স উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেম ভার্সন ১৮.৪। এতে মিডলওয়্যার হিসেবে রয়েছে জনপ্রিয় রোবট অপারেটিং সিস্টেম রস (জঙঝ) জাভা এবং পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষায় রোবটের কন্ট্রোল মোশনসহ যাবতীয় সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে।
রোবটটি তৈরিতে ৮জিবি র্যামের কোর আই ফাইভ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ৩টি মোটর কন্ট্রোলার এবং একটি মাইক্রো-কন্ট্রোলার রয়েছে। একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল রয়েছে এতে। রোবটটি মোট ডিগ্রি অফ ফ্রিডম ৩৬ এবং ৩৬টি মোটর রয়েছে এতে। লি এর চেহারাসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা।