দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে উদ্যোগ আছে অনেক। কিন্তু এত উদ্যোগ থাকার পরও পুরোপুরি নিরাপদ করা যাচ্ছে না ইন্টারনেট। তাই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এমন একটি প্রযুক্তি বসাতে চায়, যা ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত হবে। দেশের ভেতরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমের ক্ষতিকর ও আপত্তিকর লিংক, কনটেন্ট প্রদর্শিত হবে না।
যদিও বিটিআরসির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ইউটিউব থেকেও) থেকে সরাসরি আপত্তিকর লিংক সরানো, কনটেন্ট ব্লক করার মতো সক্ষমতা নেই। সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষ বরাবর অনুরোধ পাঠিয়ে থাকে। ওইসব সামাজিক মাধ্যমগুলো তাদের গাইডলাইন ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায়— এমন সব লিংক বা কনটেন্ট সরিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ রাখে। এটাকেই সফলতা হিসেবে দেখানো হয়। বিটিআরসি এমন একটি প্রযুক্তি বসাতে চায়, যা দিয়ে কমিশন সরাসরি আপত্তিকর সব লিংক অপসারণ, ব্লক করতে পারবে। ফলে দেশের ভেতরে সেসব আর প্রদর্শিত হবে না।
এমনই একটি কারিগরি ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য বাজার পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য কারিগরি সলিউশন প্রস্তাব করতে বিটিআরসি একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। ১১ সদস্যের ওই কমিটির প্রধান বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের ইন্টারনেট গ্রাহকদের সর্বনিম্ন সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কমিটি এমন একটি কারিগরি সলিউশন প্রস্তাব করবে— যার মাধ্যমে কোনও সামাজিক মাধ্যম, ওয়েব সাইটের ক্ষতিকর ও আপত্তিকর লিংক বা কনটেন্ট বন্ধ করা যায়, বা প্রদর্শিত না হয়, সে কার্যক্রম বিটিআরসি থেকে সরাসরি সম্পাদন করা যাবে।
বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। শিগগিরই শুরু হবে বলে জানতে পেরেছি।
বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, গত বছরের ৬ অক্টোবর জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভায় রাষ্ট্রবিরোধী বা জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট ব্লক বা অপসারণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত দেন। এটা বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আপত্তিকর লিংক সরানো, কনটেন্ট ব্লক করার বিষয়ে বিটিআরসির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা থাকলেও দেশে বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে স্বল্প পরিসরে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন টেলিযোগাযোগ অধিদফতর (ডট) সাইবার থ্রেট ডিটেকশন রেসপন্স (সিটিডিআর) এর মাধ্যমে বিটিআরসির নির্দেশনা মোতাবেক ওয়েবসাইট ব্লক করা গেলেও কোনও একটি ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কনটেন্ট ব্ন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে না। জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আপত্তিকর কনটেন্ট এবং ডোমেইন বন্ধ করার জন্য টেলিযোগাযোগ অধিদফতর (ডট) ২০১৮ সালে একটি কারিগরি ব্যবস্থা স্থাপন করে। যার মাধ্যমে বিটিআরসি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ধারা (৮) অনুযায়ী, ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তবে বর্তমানে ওই সিস্টেমের মাধ্যমে শুধু ওয়েবসাইট বা ডোমেইন এবং স্বল্প সংখ্যক প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ বন্ধ করা যায়। আরও জানা যায়, সিটিডিআর কারিগরি ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি কোনও কোনও কনটেন্ট বন্ধ বা অপসারণ করা সম্ভব হয় না। তবে ওই সিস্টেমের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কনটেন্ট ফিল্টার করা সম্ভব হয়ে থাকে।
বিটিআরসি মনে করে, ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য এমন একটি কারিগরি ব্যবস্থা বা সলিউশন চালু করা দরকার হবে, যাতে অনিরাপদ সাইট বা কনটেন্ট দেশে প্রদর্শিত না হয়। এজন্য এমআইটিএম (ম্যান ইন দ্য মিডল) পদ্ধতির সম্ভাব্য সলিউশন স্থাপনের মাধ্যমে সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বাধ্যতামূলকভাবে নিরাপদ ইন্টারনেট বা সেফ ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্মতি প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, ওই গ্রাহক বাংলাদেশের কোথাও কোনও ইন্টারনেট সার্ভিস পাবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘এটা চাইলেই বিটিআরসি করতে পারে। উদ্যোগটা ভালো। তবে ডটের ডিপিআই (ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন) প্রযুক্তিতে যেমন দেশের সব আইআইজিকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) কানেকশন বা লিংক দেওয়া আছে, তেমনই বিটিআরসিকেও আইআইজিগুলোকে লিংক দিতে হবে।’ সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন