স্মার্টফোন তৈরির সময় বেশকিছু সফটওয়্যার প্রি-ইনস্টলড বা আগে থেকে ইনস্টল করে দেয়া থাকে। ব্যবহারকারী ইচ্ছে করলেই সেসব অ্যাপ আনইনস্টল করতে পারেন না। তবে এবার ডিভাইস থেকে প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ অপসারণের সুবিধা প্রদানে বাধ্য করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। খবর গিজচায়না।
নতুন নিরাপত্তা নীতিমালার অধীনে অপারেটিং সিস্টেমে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নতুন এ নীতিমালা কার্যকর হলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন বাজারে নতুন পণ্যের বাজারজাত সময় অনেক পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকদের মতে, এ উদ্যোগ নেয়ার ফলে সেলফোন ব্র্যান্ডগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্যামসাং, ভিভো, অ্যাপল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে। কেননা এসব ব্র্যান্ডের ডিভাইসে অনেক প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ থাকে, যেগুলো চাইলেও মুছে ফেলা যায় না।
ভারতের বাজারে শীর্ষে থাকা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি এদিক থেকে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। কেননা প্রতিষ্ঠানটির এমআইইউআই ১৪ ইন্টারফেসে মাত্র আটটি অ্যাপ অপসারণযোগ্য নয়। অধিকাংশ অ্যাপই গ্রাহকদের জন্য উপকারী। এমআইইউআই ১৪-তে ব্যবহারকারীরা ফোন, মেসেজ, কনটাক্টস, ফাইল ম্যানেজমেন্ট, সিস্টেম সেটিং, অ্যাপ স্টোর ব্রাউজার ও ক্যামেরা অ্যাপ মুছে ফেলতে পারবে না।
অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা যায়, নতুন আইনের অধীনে সেলফোন কোম্পানিগুলোকে প্রি-ইনস্টলড সফটওয়্যার আনইনস্টল করার অপশন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। এছাড়া ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের ল্যাবে ভবিষ্যতে বাজারজাতের অপেক্ষায় থাকা ডিভাইসগুলো পরীক্ষা করা হবে।
সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের নতুন ভার্সন ব্যবহারকারীদের জন্য চালুর আগে ভারত সরকার পরীক্ষা করার ব্যাপারে ভাবছে। প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা যায়, নতুন নীতিমালা বা আইন কার্যকরের পর সে অনুযায়ী চলার জন্য কোম্পানিগুলোকে এক বছর সময় দেবে সরকার। তবে কবে এ সময় শুরু হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতে বর্তমানে যেসব চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রয়েছে সেগুলোর বাজার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের বাজার হিস্যা ২০ শতাংশ। অন্যদিকে শাওমি, ভিভো ও অপোর মোট বাজার হিস্যা ৫০ শতাংশ। সে হিসেবে অ্যাপলের বাজার হিস্যা মাত্র ৩ শতাংশ।
প্রযুক্তি খাতের একজন বিশ্লেষকের দাবি, নতুন আইন কার্যকরের আগে প্রি-ইনস্টলড অ্যাপগুলোর মধ্যে কোনগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য উপকারী আর কোনগুলো নয় তা যাচাই করতে হবে। আরেক বিশ্লেষক জানান, বাজারজাতের আগে পরীক্ষণের যে পদ্ধতি কার্যকরের কথা ভাবা হচ্ছে সেটি সেলফোন উন্মোচনের সময় অনেক পিছিয়ে দেবে। বর্তমানে প্রতি ২১ সপ্তাহ পর সরকারি বিভিন্ন গ্রুপ সেলফোনের নিরাপত্তা লেভেল পরীক্ষা করে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজারজাতের ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় বাধা।
অতীতে ভারত সরকার চীনের বিভিন্ন সেলফোন কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ কারণে বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষে থাকা শাওমি বিভিন্ন আইনি জটিলতায় ভুগছে। নতুন নীতিমালার কারণে দেশটিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
রয়্যালটি পাঠানোর নামে শাওমির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এ ঘটনার পর ভারতের ফেডারেল ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ব্যুরো, দি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গত এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শাওমির ৬৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আটকে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অর্থ আটকে দেয়ার মাধ্যমে পারতপক্ষে ভারতে তাদের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। চলতি মাসের শুরুতে ভারতের একটি আদালত অর্থ আটক ছাড়ের বিপরীতে রায় দেন।