ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি বেশ পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু এত পরিশ্রমের ফলেও যদি সেই কনটেন্ট প্রত্যাশিত সাড়া না পায়, তাহলে হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। তাই ফেসবুকে আপনার কনটেন্টের রিচ এবং এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন কনটেন্ট অপ্টিমাইজেশন। ক্রিয়েটর স্টুডিওর মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন কনটেন্ট অপ্টিমাইজেশনের দারুন কিছু টুল। আপনার পেজ এবং কন্টেন্টের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী জায়গা হচ্ছে এই ক্রিয়েটর স্টুডিও। এর বিভিন্ন টুল এবং নির্দেশিকা আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। আপনার কনটেন্ট তৈরির পেছনে করা কঠোর পরিশ্রম যেন বিফলে না যায়, সেজন্যে চলুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি কৌশল সম্পর্কে। যেগুলো আপনার কন্টেটের রিচ এবং এনগেজমেন্ট বাড়িয়ে সেগুলোকে পৌঁছে দিবে আরও বিস্তৃত সংখ্যক দর্শকের নিকট।
স্মার্ট ক্রপ এবং স্মার্ট প্রিভিউ
ফেসবুক ফিডের ছবি বা ভিডিও কনটেন্ট ১:১ এবং ৪:৫ অনুপাতের হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে, রিলসের অনুপাত ৯:১৬। আমরা এখানে, রিলস ব্যতীত বাকি ভিডিও নিয়ে কথা বলবো।
আমরা ক্যামেরায় ল্যান্ডস্কেপে বা অনুভূমিকভাবে ভিডিও করলে সেটির অনুপাত হয় ১৬:৯। আর লম্বালম্বিভাবে করলে হয় ৯:১৬। এ ক্ষেত্রে, স্মার্ট ক্রপ আপনাকে ফিডের জন্য ১৬:৯ বা অনুভূমিক অনুপাতের ভিডিওগুলিকে ১:১ বা ৪:৫ অনুপাতের ভিডিওতে রূপান্তর করে দেবে।
প্রশ্ন জাগতে পারে এর কী দরকার? এর উত্তর হচ্ছে, মানুষ সাধারণত তাদের ফোন ল্যান্ডস্কেপে ব্যবহার করে না। তারা ফোন ভার্টিকালি বা লম্বালম্বিভাবেই দেখে থাকেন। নিউজফিডে ভিডিও দেখার জন্য যদি ফোন বার বার ঘুরিয়ে ল্যান্ডস্কেপে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় সেই ভিডিওগুলো মানুষ এড়িয়ে যায়। তাই, উল্লম্বভাবে বা লম্বালম্বিভাবে ক্রপ করা ভিডিওগুলো দর্শকের মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করে।
মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে আপনি স্মার্ট ক্রপ করতে পারবেন। টুলটি কন্টেন্টের মূল বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দিয়ে, সেগুলোকে কেন্দ্রে এবং ইন-ফ্রেমে রেখে ক্রপিং করে। এটি সাধারণত এমন বিষয়বস্তুগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়, যেগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। যেমন ধরুন, মানুষের মুখ, উচ্চ-কন্ট্রাস্টযুক্ত এলাকাগুলো কিংবা বিশেষ কোনো টেক্সট আছে এমন জায়গাগুলো।
আপনি কনটেন্ট প্রকাশের আগে নতুন করে ক্রপ করা বা রিফ্রেম করা ভিডিওটি এর মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে পারবেন। আপনি চাইলে সেখানে আসল ভিডিওটির সঙ্গে রিফ্রেম করা ভিডিওটিরও তুলনা করে দেখতে পারবেন। তারপর কোনটি প্রকাশ করতে চান তা ঠিক করুন। তারপর, সরাসরি ক্রিয়েটর স্টুডিও থেকে কনটেন্টটি প্রকাশ করতে পারেন।
স্মার্ট ক্রপ ব্যবহারের সুবিধা
আপনার ভিডিওর আকার ম্যানুয়ালি রিফ্রেম করার ঝামেলা এড়াতে পারবেন।
ভিডিও অপ্টিমাইজ করতে যে পরিমাণ কাজ এবং সময় লাগে তা কমিয়ে আনতে পারবেন।
ভিডিওর পারফরম্যান্স বৃদ্ধি হয়। অর্থাৎ, মানুষ এই ধরনের ভিডিও বেশি দেখে এবং এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি পায়।
স্মার্ট ক্রপ আপনার কন্টেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষেত্রগুলো দৃশ্যমান রাখতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে। অন্যদিকে, স্মার্ট প্রিভিউ আপনার ভিডিওর সেই অংশটি শনাক্ত করতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে, যা মানুষ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে করবে। তারপর সে অংশটি কেটে ১০-সেকেন্ডের একটি ক্লিপ তৈরি করে।
তারপর সেই ক্লিপটি ভিডিওর শুরুতে যোগ করে দেয়। কারণ, দীর্ঘ ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে, শুরুতে একটি ট্রেইলার যোগ করা একটি ভালো অভ্যাস। কারণ এটি দর্শকদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে এবং কনটেন্টটি পুরোটা দেখে শেষ করার জন্যে আগ্রহী করে রাখতে পারে।
ভিডিও প্রকাশের আগে, আপনি চাইলে স্মার্ট প্রিভিউটি পর্যালোচনা করে দেখতে পারবেন। চাইলে এটি সামঞ্জস্য করে নিতে কিংবা বাতিলও করে দিতে পারবেন।
স্টোরি হাইলাইট ক্লিপিং টুল
আপনার পেজের ভিডিও কনটেন্টগুলো ফেসবুক স্টোরিজে শেয়ারের মাধ্যমে সেগুলোর প্রচার করা সম্ভব। এতে করে আপনার কন্টেন্টের রিচ এবং ভিউ বাড়তে পারে।
স্টোরি হাইলাইট ক্লিপিং টুলের মাধ্যমে আপনি প্রকাশিত ভিডিও থেকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ক্লিপ তৈরি করে সরাসরি ফেসবুক স্টোরিজে শেয়ার করতে পারবেন। এখানে আপনি চাইলে ম্যানুয়ালি ক্লিপ নির্বাচন করতে পারেন অথবা মেশিন লার্নিং দ্বারা প্রস্তাবিত ক্লিপও ব্যবহার করতে পারেন। স্টোরির ক্লিপটিতে একটি ‘সি মোর’ অর্থাৎ আরও দেখুন নামক বোতাম দিয়ে পোস্ট করা হয়। যা দর্শকদের আপনার আসল ভিডিওতে নিয়ে যাবে।
এই ফিচারটি আপনি ক্রিয়েটর স্টুডিওর ‘পাবলিশড’ ট্যাবে গিয়ে পাবেন।
পোস্ট টেস্টিং
কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি সব সময়ই কাজ করে। পোস্টে কী শিরোনাম দিলে কিংবা কোন থাম্বনেইল দিলে সেটি তার দর্শক সবচেয়ে বেশি পছন্দ করবেন। একটি কন্টেন্টের কোন সংস্করণটি আপলোড করলে বেশি ভিউ হবে। এসব বিষয় নিয়ে অনেক সময়ই বেশ দুশ্চিন্তা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
ক্রিয়েটর স্টুডিওর পোস্ট টেস্টিং আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। পোস্ট টেস্টিং টুলটির মাধ্যমে আপনি একটি পোস্টের ৪টি ভেরিয়েন্ট বা সংস্করণ পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কন্টেন্টের কোন সংস্করণটি আপনার দর্শক সবচেয়ে বেশি পছন্দ করছে।
ধরুন আপনি একই কন্টেন্টের ৪টি ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ তৈরি করলেন। যেগুলোর সম্পাদনা, বিবরণ, শিরোনাম এবং থাম্বনেল ভিন্ন ভিন্ন। আপনি বুঝতে পারছেন না কোনটি দিলে মানুষ বেশি পছন্দ করবে। সেক্ষেত্রে এই টুলটি ১-মিনিটের ভিউ, মন্তব্য, শেয়ার, প্রতিক্রিয়া, লোকজনের কাছে পৌঁছানো, লিঙ্ক ক্লিক ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে একটিকে বিজয়ী নির্ধারণ করবে।
পরীক্ষাটির সময়, পোস্টগুলো আপনার দর্শকদের একটি অংশের কাছে শুধু প্রচার করা হয়। অর্থাৎ, এটি পাবলিকলি পোস্ট করা হয় না। আপনার পেজেও কনটেন্টটি পোস্ট করা হয় না। কয়েকজনকেই ফেসবুক কনটেন্টটি দেখায়। এতে করে তাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে ফেসবুক আপনাকে একটি পরিসংখ্যান দেখিয়ে থাকে এবং আপনি বুঝতে পারেন কন্টেন্টের কোনো সংস্করণটি বেশি ভালো করছে।
আপনি কতক্ষণ যাবত এই পরীক্ষা চালাতে চান সেটিও বেছে নিতে পারবেন। পরীক্ষা শেষ হলে, আপনি চাইলে কনটেন্টের সবচেয়ে সফল সংস্করণটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পেজে প্রকাশিত হয়ে যাবে।
অটো-ক্যাপশন এবং সাবটাইটেল
আপনার কন্টেন্টে ক্যাপশন বা সাবটাইটেল থাকলে সেটি আরও ভালো পারফর্ম করে এবং বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। যারা শব্দ বন্ধ করে ভিডিও দেখতে চায়, তাদের কাছে এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। আপনার ভিডিওতে ক্যাপশন যোগ করা হলে, আপনার ভিডিওর ওয়াচ টাইম এবং ডিস্ট্রিবিউশন স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
কনটেন্টে ম্যানুয়ালি ক্যাপশন ব্যবহার বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে আপনার সময় বাঁচানোর জন্যে ফেসবুক ভিডিওতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাপশন তৈরি করে থাকে। সাধারণত ডিফল্টভাবেই আপনার সব ভিডিও কন্টেন্টের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি ক্যাপশনগুলো চালু থাকে। আপনি চাইলে সেগুলো পেজ সেটিংস থেকে বন্ধ করে রাখতে পারেন৷
যদিও ফেসবুকের তৈরি সয়ংক্রিয় ক্যাপশনগুলো শুধু ভিডিওতে বলা ভাষার ওপরই তৈরি হয়। কিন্তু তবুও সেগুলো অন্যান্য অঞ্চল এবং ভাষার নতুন দর্শকদের কাছে আপনার কনটেন্ট পৌঁছে দিতে সাহায্য করতে পারে। যা আপনার কন্টেন্টের বিশ্বব্যাপী ডিস্ট্রিবিউশনে সাহায্য করবে।
অটো-জেনারেটেড সাবটাইটেল ১১টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। আপনার দর্শক চাইলে ইংরেজি, ইন্দোনেশিয়ান বাহাসা, স্প্যানিশ (ল্যাটিন আমেরিকা), হিন্দি, ভিয়েতনামী, তাগালগ, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ, প্রমিত আরবি, উর্দু, তামিল এবং তেলেগু ক্যাপশন বা সাবটাইটেলে আপনার কনটেন্ট দেখতে পারবে। তবে মনে রাখবেন যে, অটো-জেনারেটেড সাবটাইটেলগুলো শুধু সেই ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে কাজ করবে যেগুলোতে পূর্বে থেকে বিদ্যমান কোনো ক্যাপশন অন্তর্ভুক্ত করা নেই।