কম্পিউটারে থাকা তথ্যের এক ধরনের গুদামঘর হচ্ছে হার্ড ড্রাইভ, তাই প্রয়োজন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি হার্ড ড্রাইভও কিনতে হয়। এ ক্ষেত্রে হার্ড ড্রাইভের বিকল্প হতে পারে ভার্চুয়াল হার্ড ড্রাইভ (ভিএইচডি)।
যেটার ডিস্ক সেক্টর, নতুন ফাইল-ফোল্ডার তৈরি, ইউজার অ্যাপ্লিকেশন ও অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনা সবই সাধারণ হার্ড ড্রাইভের মতো।
শুধু এটি পরিচালনা করার পদ্ধতিটা ভিন্ন। অন্য হার্ড ড্রাইভের মতো এটি কোনো হার্ডওয়্যার নয়, বরং সফটওয়্যার। এটি এমন এক ধরনের ফাইল ফরম্যাট ও অ্যাপ্লিকেশনের সমন্বয়, যা ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি ভার্চুয়াল যন্ত্রের। এটি পরিচালনার মূল কেন্দ্রে থাকে একটি ভার্চুয়ালাইজেশন ম্যানেজার ও প্যারেন্টিং অপারেটিং সিস্টেম। সাধারণ হার্ড ড্রাইভের মতো এতে ডিস্ক পার্টিশন ও ফাইল সিস্টেমের মতো ফিচারও রয়েছে।
এ ছাড়া আকারের ওপর ভিত্তি করে এতে একই সঙ্গে একাধিক ভিএইচডি পরিচালনার সুযোগ পাওয়া যায়। ভিএইচডি ফাইল ব্যবহারের জন্য ভিএমওয়্যার এর ভার্চুয়াল বক্স ও মাইক্রোসফটের হাইপার-ভি নামের ভার্চুয়ালাইজেশন প্রোগ্রামের প্রয়োজন পড়ে।
সহজে স্থানান্তরযোগ্যতা অবশ্যই ভিএইচডির অন্যতম বড় একটি সুবিধা। অনলাইনে ভিএইচডি ফাইল আদান-প্রদান করা যায়, চাইলেই একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে নিয়ে ঘুরেও বেড়ানো যায়। তথ্য, ফাইল ইত্যাদির সহজে ব্যাকআপ তৈরি করা যায় এবং ভিএইচডিতে স্টোরেজ সুবিধাও অপেক্ষাকৃত ভালো। এতে খুব সহজে এবং কম সময়ে যেকোনো ফাইল বা ফোল্ডারের অনুলিপি তৈরি করা যায়।
শুধু বহনের দিক দিয়েই নয়, খরচের দিকেও খুব ‘হালকা’ এই ভার্চুয়াল হার্ড ড্রাইভ। তাই তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরিতে অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও কম স্থান সংকুলানে ভিএইচডি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি হতে পারে।
ধারণক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ৩ ধরনের ভিএইচডি পাওয়া যায়–
ফিক্সড ভিএইচডি: এ ধরনের ভিএইচডিতে, যে যন্ত্রটিতে ভিএইচডি ফাইল পরিচালনা করা হয়, সেটির ধারণক্ষমত সীমাবদ্ধ থাকে এবং বাড়ানো-কমানো যায় না।
ডাইনামিক ভিএইচডি: আভ্যন্তরীণ স্টোরেজ কতটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে এই ভিএইচডি ফাইলগুলোর আকার পরিবর্তিত হয়। তবে ঠিক কতটা পর্যন্ত আকার বৃদ্ধি পাবে, সেটির একটি উচ্চসীমা ব্যবহারের শুরু থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। এই সীমার বেশি যাওয়া যায় না, তবে এ ক্ষেত্রে স্টোরেজ বরাদ্দের গতি বৃদ্ধি পায়।
ডিফারেন্সিং ভিএইচডি: এ ধরনের ভিএইচডি ফরম্যাট সবচেয়ে কম জনপ্রিয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য ডিস্কের কপি বা অনুলিপি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ফরম্যাটের মাধ্যমে একটি প্যারেন্ট ডিস্ক এবং একটি চাইল্ড ডিস্ক তৈরি হয়। এবং ডিফারেন্সিং ভিএইচডি ব্যবহারের মাধ্যমে চাইল্ড ডিস্কে কোনো প্রভাব না ফেলেই প্যারেন্ট ডিস্কের ফাইলে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
ভিএইচডি ফাইল তৈরির পদ্ধতি
অপারেটিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে ভিএইচডি ফাইল তৈরির প্রক্রিয়া আলাদা হয়ে থাকে। যদি উইন্ডোস পিসি ব্যবহার করা হয়, তাহলে আগের ড্রাইভ বা পার্টিশন থেকে ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে ভিএইচডি তৈরি করা যাবে।
‘উইন্ডোস কি’ থেকে সরাসরি স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে ‘ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ লিখে সার্চ করতে হবে। ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট অপশনটি শুরু করার পর যে ড্রাইভ বা পার্টিশন থেকে ভিএইচডি ফাইল তৈরি করতে চাচ্ছেন, সেটি বাছাই করতে হবে। নির্দিষ্ট অংশ বাছাইয়ের পর ‘অ্যাকশন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ভিএইচডি পাথ ও আকার সম্পর্কে একটি প্রশ্ন করা হবে। একই সঙ্গে ভিএইচডির ধরনও নির্ধারণ করতে হবে এবং তারপর যথাযথ ধাপ অনুযায়ী কম্পিউটার একটি ভিএইচডি ফাইল তৈরি করবে। ভিএইচডি ফাইল তৈরির পর সেটি সাধারণ ড্রাইভের মতোই ব্যবহার করা যাবে। হার্ডওয়্যার হার্ড ড্রাইভের ব্যাকআপ হিসেবেও ভিএইচডি বেশ সুবিধাজনক একটি বিকল্প হতে পারে।
তথ্যের ভার্চুয়ালাইজেশনের জন্য এবং এর মাধ্যমে সহজে তথ্যের প্রবেশাধিকার পেতে ভিএইচডি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এতে একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানও সহজতর হয়। দিনে দিনে তথ্যের পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা আরও কম স্থানে বেশি তথ্য সংরক্ষণের পথে এগোচ্ছি। সেক্ষেত্রে সেকেলে হার্ড ড্রাইভের চেয়ে ভার্চুয়াল হার্ড ড্রাইভ বেশি মানানসই।