মানুষ অভ্যাসের দাস! আর এই অভ্যাসের সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যও বিশেষ ভাবে জড়িত। অথচ আমরা নিজের অজান্তেই কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের স্বাস্হ্যকে অবহেলা করে থাকি। যেমন- অনেকে রাতে বিছানায় আলো নিভিয়েও হাতে স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যাস। এতে তো ঘুমের ১২টা বাজেই! এর বিপদ আরো মারাত্মক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ধকারে স্মার্টফোনের আলো অন্ধত্ব পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, এই অভ্যাস আমাদের চোখের পাশাপাশি মস্তিষ্কের ওপর ফেলছে চরম বিরূপ প্রভাব। যার ফলে শরীরের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন, স্মার্টফোনের আলো কীভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্মার্টফোনের পর্দা এক ধরণের উজ্জ্বল নীল আলো নিঃসরণ করে, যা দিনের কড়া আলোতেও আমাদেরকে ফোনের পর্দা স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এই নীল আলো ভিজিবল লাইট স্পেকট্রামের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে রাতে ফোন ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক এই নীল আলোকরশ্মির কারণে ধাঁধায় পড়ে যায় এবং একে দিনের আলো হিসেবে ধরে নেয়।
কারণ আমাদের মস্তিষ্কে সৃষ্টির আদিকাল থেকে এমনভাবেই প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে আছে যে, দিনে আলো থাকে এবং সেটি জেগে থাকার সময়। অপরদিকে রাত হয় অন্ধকার এবং এটি ঘুমানোর সময়। পুরো শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম এই নিয়ম অনুসারেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল থেকে নির্গত হওয়া আলোর মধ্যে ৭টি রঙের রশ্মিই থাকে। কিন্তু এর মধ্যে নীল রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী। তাই এটি ক্ষতিও করে সবচেয়ে বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, মোবাইল ফোন যে নীল আলো ছড়ায়, রুমের লাইট নিভিয়ে দেওয়ার কারণে রাতে সেটি আরো তীক্ষ্ণ হয়ে যায়। স্মার্টফোনের নীল আলো শরীরে মেলাটোনিন নামের হরমোন উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মেলাটোনিন মূলত এমন একটি হরমোন, যা রাতের বেলা নিঃসৃত হয়ে শরীরকে ঘুমিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়। আর এই মেলাটোনিনের অভাবে ঘুমের স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে। চলুন দেখা যাক, স্মার্টফোনের নীল আলোকরশ্মি শরীরের কী কী ক্ষতি করে?
১. এর কারণে ঘুম কমে যায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে তা পরদিন স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. চোখে প্রবল চাপ পড়ে। ফলে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে।
৩. ফোনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। এতে নতুন কিছু শেখায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. মাথা, ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা অনুভূত হতে দেখা যায়।
৫. চোখের ক্ষতি হতে পারে, যেমন- চোখে শুষ্ক বোধ করা, চোখে চুলকানি হওয়া, চোখে ঘোলা দেখা, দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া, এমনকি রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৬. স্মার্টফোনের আলো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের কাজেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, ফলে স্থুলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. রাতে দীর্ঘক্ষণ আলোর সংস্পর্শে থাকা এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার সঙ্গে স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে।
আসলে প্রযুক্তি কখনো আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে, আবার কখনো অভিশাপ। নির্ভর করছে আপনি কীভাবে এটিকে ব্যবহার করছেন, তার ওপর।