মানবদেহে ব্রেইন চিপের পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে ইলোন মাস্ক মালিকানাধীন নিউরোলিংক। চলতি বছর এ পরীক্ষা সম্পন্নের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে ব্রেইন চিপ স্টার্টআপটি। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্যারিসে আয়োজিত ভিভাটেক ইভেন্টে মাস্ক এ কথা জানান।
বক্তব্য দেয়ার সময় নিউরোলিংকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মাস্ক জানান, রয়টার্সের পর্যবেক্ষণে থাকা ওয়েবকাস্টে টেট্রাপ্লেজিক বা প্যারাপ্লেজিক রোগীদের মাথায় ব্রেইন চিপ বসানো হবে। শরীরের কোনো অংশ অবশ হয়ে যাওয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্যারালাইসিস নামে যেটি পরিচিত। এর অন্যতম দুটি স্তর হচ্ছে টেট্রাপ্লেজিক ও প্যারাপ্লেজিক। এর মধ্যে টেট্রাপ্লেজিক সবচেয়ে জটিল। এ স্তরে রোগীর ব্রেন ছাড়া শরীরের বাকি অংশ অচল হয়ে যায়। তবে মোট কতজন রোগীকে চিপ ইমপ্লান্টের আওতায় আনা হবে বা কতদিন পর্যন্ত চলবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে টেসলা, টুইটার ও স্পেসএক্সের মালিক ইলোন মাস্ক বলেন, ‘চলতি বছর শেষেই হয়তো প্রথম চিপ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
গত মাসে নিউরোলিংক জানায়, প্রথম পর্যায়ে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমতি পাওয়া গেছে। এটি স্টার্টআপটির জন্য বড় অর্জন। কেননা পশুর দেহে এ পরীক্ষা চালানোর জন্য সরকারি তদন্তের মুখেও পড়তে হয়েছিল কোম্পানিটিকে। আগে দেয়া এক বিবৃতিতে নিউরোলিংককে ব্রেইন ইমপ্লান্ট ও সার্জিক্যাল রোবট ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে এফডিএ। এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু জানা যায়নি।
বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, মানবমস্তিষ্কে চিপ স্থাপন নিরাপদ বলে প্রমাণ করতে পারলেও বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু করতে নিউরোলিংককে কয়েক বছর এমনকি এক দশকও অপেক্ষা করতে হতে পারে। অন্যান্য অনেক নিউরোটেক কোম্পানি মানবদেহে চিপ স্থাপন করেছে। তাদের সঙ্গেও নিউরোলিংককে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
২০১৬ সালে নিউরোলিংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের শুরুতে প্রথম এফডিএর অনুমোদন নেয় কোম্পানিটি। অন্যান্য সংস্থা নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে আবেদন বাতিল করে দেয় বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসে। এসব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ডিভাইসে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারি। সংস্থাগুলোর বক্তব্য ছিল, চিপ স্থাপনে যে তার ব্যবহৃত হবে সেগুলো মস্তিষ্কের স্নায়ুর জন্য ক্ষতিকর হবে। এছাড়া মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতি না করে ডিভাইস বের করে আনার বিষয়ও ছিল। প্রাণীদেহে পরীক্ষার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে নিউরোলিংক ফেডারেলের সমালোচনার মুখেও পড়ে।
২০২২ সালে রয়টার্সের কাছে নিউরোলিংকের কর্মীরা জানান, এফডিএর দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার জন্য কোম্পানিটি অনেক প্রাণীর দেহে চিপ স্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে প্রাণীমৃত্যুর হারও ছিল বেশি। সূত্র জানায়, প্রাণীদেহে পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে কোম্পানিটি মানবদেহে চিপ স্থাপনের অনুমতি গ্রহণে ডাটাবেজ তৈরি করেছে।
প্রাণী কল্যাণ লঙ্ঘনের জন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের অফিস অব ইন্সপেক্টর জেনারেলের তদন্তের মুখেও পড়ে নিউরোলিংক। তবে এ বিষয়ে সংস্থাটির মুখপাত্ররা মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় কোম্পানিটির বাজারমূল্য উল্লেখজনকভাবে বেড়েছে। দুই বছর আগে প্রাইভেট তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে এর মূল্য ছিল ২০০ কোটি ডলার। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
নিউরোলিংকের চিপ স্থাপন কার্যক্রম দ্রুত বাড়ায় প্রাণী বোর্ডে যারা কর্মরত ছিলেন তারা লাভবান হয়েছেন বলেও জানা গেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেকেন্ডারি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোম্পানির কর্মীদের কাছে থাকা স্টকের মূল্য ১৫০ শতাংশ বেড়েছে।