কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন প্রযুক্তি খাতের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এর ব্যবহার যেমন ইতিবাচক, তেমনি অপব্যবহারও ক্ষতিকর। এরই মধ্যে সাইবার হামলা পরিচালনাকারীরা প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে অনেকটাই। আর এ প্রযুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর অধিবাসীদের সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করেছে এআইনির্ভর একাধিক প্রতিষ্ঠান।
অঙ্গীকারের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং এর ফল পরবর্তী সময়ে জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিষয়ও রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘোষণা দেয়ার সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অ্যামাজন, অ্যানথ্রোপিক, গুগল, ইনফ্লেকশন, মেটা, মাইক্রোসফট ও ওপেনএআইয়ের মুখপাত্ররা।
এআই প্রযুক্তির সক্ষমতা নিয়ে বেশ কয়েকবার সতর্কবার্তা আসার পর পরই এমন ঘোষণা এল। বিভিন্ন কোম্পানি যে গতিতে এআইয়ের বিকাশ ঘটাচ্ছে, তার ফলে ভুল তথ্য ছড়ানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে ভয় বেশি।
বাইডেন বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের জন্য উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর সম্ভাব্য হুমকির ওপর পরিষ্কার দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি সেটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ অন্যদিকে সম্প্রতি লামা ২ নামে নিজস্ব এআই টুল উন্মোচন করেছে ফেসবুকের মালিক কোম্পানি মেটা। মেটার বৈশ্বিক গণসংযোগ বিভাগের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেন, ‘এ প্রযুক্তি নিয়ে একটু বেশিই উন্মাদনা ছড়িয়েছে।’
সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তির অংশ হিসেবে কোম্পানিগুলো বেশকিছু শর্ত পালনে একমত হয়েছে। সেগুলো হলো কোনো এআই ব্যবস্থা উন্মোচনের আগে কোম্পানির ভেতর ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এর নিরাপত্তা পরীক্ষা করা।
লোকজন যেন জলছাপ দেখে এআই তৈরি কনটেন্ট চিহ্নিত করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এআইয়ের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। পক্ষপাত, বৈষম্য ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের মতো ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
অন্য বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানায়, তাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো মানুষ যেন সহজেই বুঝতে পারে যেকোনো অনলাইন কনটেন্টগুলো এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে তা নির্ধারণ করা।
বাইডেন বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর সেটা আমাদের সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আবার এর উল্টোটাও ঘটার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।’
জুনে স্যানফ্রান্সিসকো সফরের সময় এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কনটেন্টে জলছাপ যুক্তের বিষয়ে ওপেনএআইয়ের প্রধান স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেন ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন। ভিডিওযুক্ত এক টুইটে ব্রেটন লেখেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, বিশেষ করে জলছাপের বিষয়টি।’
সম্প্রতি স্বাক্ষরিত এ ঐচ্ছিক সুরক্ষা ব্যবস্থার চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনার পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে বিবিসি। পাশাপাশি, একটি নির্বাহী আদেশ নিয়ে কাজ করার কথাও বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউজ বলছে, এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও কাজ করবে। এ প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি শঙ্কাগুলোর মধ্যে ভুল তথ্য তৈরি করে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি এটি মানবতার অস্তিত্বের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।