কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিডিও গেমিং শিল্পের বহুমাত্রিকতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে। গেম ডেভেলপারদের শীর্ষ সংস্থাগুলোর একজন বিবিসিকে সম্প্রতি এ কথা বলেন। যুক্তরাজ্যের গেমিং শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী অলাভজনক বাণিজ্যিক সমিতি দি ইনডিপেনডেন্ট গেম ডেভলপার অ্যাসোসিয়েশনের (টিআইজিএ) প্রধান রিচার্ড উইলসন বলেন, ‘এআই গেম তৈরির খরচ কমিয়ে দেবে ও প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করবে।’
কয়েক দশক ধরে ভিডিও গেম তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কিছু মানুষ গেমিং শিল্পে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে নিশ্চিত। তারা মনে করে গেম তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কর্মসংস্থানের পরিমাণ কমিয়ে দেবে, যা স্টুডিওগুলোর জন্য আইনি সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
গেম সম্পর্কিত বাণিজ্যিক সংস্থা ইউকেআই। যুক্তরাজ্যের গেম কোম্পানিগুলোর তদারকি করে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গেমিং শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ঘিরে খানিকটা উদ্বেগ বিদ্যমান। তবে এআইয়ের ব্যবহার শিল্পটির জন্য চমৎকার একটি সুযোগ। গেম বিশেষজ্ঞ টমি থম্পসন বলেন, ‘আজ আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি তার তুলনায় এআই অনেক সহজ রূপ, কিন্তু মৌলিকভাবে মূল নীতিগুলো একই।’
এআই একটি গেমের স্ন্যাপশট দেখার মাধ্যমে চৌকস সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে গেমের চরিত্রগুলো করণীয় বিষয়ে আরো বেশি বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ১৯৮০ সালে প্রথম মুক্তি পায় প্যাক-ম্যান। যেখানে নন-প্লেয়ার-চরিত্রগুলোকে পরিচালনার জন্য এআইয়ের মৌলিক ফর্ম ব্যবহার করা হয়। এরপর বছরের পর বছর স্ক্রিনে যা ঘটে তা প্রভাবিত করতে এআইয়ের ব্যবহার করা হয়েছে। এআই ক্রমবর্ধমানভাবে স্ক্রিন বা ডিভাইসে বিভিন্ন গেমকে তুলে ধলার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মানে গেম ডেভেলপমেন্ট, ডিস্ট্রিবিউশন এমনকি মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই।
গেমিং শিল্পে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে উইলসন বলেন, ‘গেম স্টুডিওগুলোয় গেম ডেভেলপমেন্টকে স্বয়ংক্রিয় করার অনুমতি দেয়া উচিত। যেমন প্রযুক্তি প্লাটফর্ম কারিশমাডটএআই গেমিংয়ে জেনারেটিভ এআই কৌশল ব্যবহারের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা গাই গ্যাডনি মনে করেন, জেনারেটিভ এআই নির্মাতাদের গল্প বলার একটি নতুন উপায় বাতলে দেবে। গেমিংয়ে এআইয়ের ব্যবহারবিষয়ক ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে টমি থম্পসনের। প্রযুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও তিনি সতর্ক করেছেন যে শিল্পকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
বর্তমানে ভিডিও গেমে ওপেন অ্যাকসেস এআই টুলসের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। তবে এ টুলসগুলো গেম ডেভেলপমেন্ট স্টুডিওগুলোর জন্য কোনো বাস্তবসম্মত বিকল্প নয়। গেম ডেভেলপাররা সহজেই এআই টুলস সম্পর্কে জানতে পারে, তবে পরিমার্জন বা কাস্টমাইজেশন ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা যায় না। কেননা গেমগুলোয় প্রায়ই নির্দিষ্ট গেমপ্লে মেকানিক্স, চরিত্রের আচরণ এবং ইন্টারঅ্যাকশন প্যাটার্ন থাকে যা জেনেরিক এআই টুলস দিয়ে সম্পূর্ণ সমাধান করা যায় না।
কিছু গেম স্টুডিও এ সমস্যাগুলোর উত্তরণে নিজস্ব এআই প্লাটফর্ম তৈরি করছে, তবে এটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ড. থম্পসনের মতে, ছোট গেম কোম্পানিগুলো ওপেন সোর্স এআই টুলের দিকে আকৃষ্ট হলেও তা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এআই গবেষণা, উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। ছোট গেম কোম্পানির জন্য তাদের সীমিত বাজেট, জনবল এবং সময় সীমাবদ্ধতার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ কঠিন হতে পারে।