আইফোনের জনপ্রিয়তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এর উঁচু মানের ক্যামেরা অন্যতম। তবে ছবি তোলা বা ভিডিও করা ছাড়াও আইফোনের ক্যামেরা দিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু কাজ করা যায়, যার মধ্যে রয়েছে অনুবাদ, ডকুমেন্ট স্ক্যানিং কিংবা অপরিচিত কোনো বস্তু শনাক্ত করতে পারা। আজকের লেখায় আইফোনের ক্যামেরার কিছু ভিন্নধর্মী উপযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
১. ম্যাক বা ম্যাকবুকের ওয়েবক্যাম হিসেবে
স্বাভাবিকভাবেই ম্যাকের ক্যামেরার তুলনায় আইফোনের ক্যামেরার গুণগত মান অনেক বেশি। বর্তমান যুগে ভিডিও কল, ভিডিও মিটিংয়ের জন্য ওয়েবক্যাম আমাদের জীবনে প্রাত্যহিক অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আইওএস ১৬ এবং ম্যাকওএস ভেনচুরায় ‘কন্টিনিউটি ক্যামেরা’ নামের একটি ফিচার চালু করে অ্যাপল। এই ফিচারের সাহায্যে আপনার আইফোনকে ম্যাকের ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ফেসটাইম, জুমের মতো বিভিন্ন ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপে এই ফিচার কাজ করে। কন্টিনিউটি ক্যামেরা ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার ভিডিও কলের মান বহুগুণ পর্যন্ত বাড়ানের পাশাপাশি ‘সেন্টার স্টেজ’ এর মতো অনেকগুলো দারুণ ভিডিও ইফেক্ট ব্যবহার করতে পারবেন। সেন্টার স্টেজ ইফেক্টটি ব্যবহার করলে আপনাকে ভিডিও কলে সবসময় ফ্রেমের মাঝ বরাবর দেখাবে।
২. ডকুমেন্ট এবং কিউআর কোড স্ক্যান করতে
আগে কোনো ডকুমেন্ট বা কিউআর কোড স্ক্যান করার জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করতে হতো। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিও ছিল। তবে এখন আইফোনের ক্যামেরা অ্যাপ দিয়েই এসব কাজ করা যায়।কিউআর কোড এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর ব্যবহার বাড়ায় এখন আর অনেক ক্ষেত্রেই কোনো তথ্য, ফাইল বা ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য ইউআরএল (ওয়েব ঠিকানা) ব্যবহার করতে হয় না, শুধু কোডের অংশটুকু ফোন দিয়ে স্ক্যান করে নিলেই হয়।
৩. কপি এবং টেক্সট অনুবাদ করতে
আপনার হাতে যদি বিদেশি ভাষায় লেখা কোনো ডকুমেন্ট, সংবাদপত্র বা বই থাকে, তাহলে আইফোনের ক্যমেরা ব্যবহার করে সেগুলো অনুবাদ করে পড়তে পারবেন। ক্যামেরাকে শুধু সেই বিদেশি ভাষার লেখাগুলোর দিকে তাক করতে হবে। ক্যামেরার লাইভ টেক্সট ফিচারের মাধ্যমে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ংভাবে আপনার পছন্দের ভাষায় অনুবাদ হয়ে যাবে।
টেক্সটগুলো যাতে হলুদ ফ্রেমের মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং লাইভ টেক্সট আইকনে ট্যাপ করতে হবে। আইফোনের এই ফিচারটি ভাষার প্রাথমিক সীমাবদ্ধতা কাটাতে সহগায়তা করলেও এর সীমাবদ্ধতা আছে। জটিল ও দীর্ঘ টেক্সট এভাবে সঠিকভাবে অনুবাদ করা নাও যেতে পারে।
৪. মুদ্রার বিনিময় হার জানতে ও এক একক থেকে অপর এককে রুপান্তর করতে
মুদ্রা বিনিময়ের হার জানতে অনেকেই কারেন্সি কনভার্টার অ্যাপ অথবা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। তবে আইফোনের ক্যামেরা অ্যাপ দিয়েও কাজটি সহজে করা যায়। অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা সংখ্যাটির দিকে ক্যামেরা তাক করুন। সংখ্যাটিকে ক্যামেরার হলুদ ফ্রেমের মধ্যে রাখতে হবে। এবার লাইভ টেক্সট আইকনে ট্যাপ করুন। ক্যামেরা সংখ্যাটি বুঝতে পারবে এবং স্ক্রিনের বাম পাশে নিচের দিকে মুদ্রার বিনিময় মূল্য দেখাবে।
একইভাবে পণ্যের পরিমাপসূচক এককও রূপান্তর করতে পারবেন। ধরুন, একটি পণ্যের দৈর্ঘ্য লেখা আছে ৩২ মিটার। কিন্তু আপনি ফুটের পরিমাপে অভ্যস্ত। আপনি খুব সহজেই মিটার থেকে ফুটে রুপান্তর করে নিতে পারবেন। আইফোনের ক্যামেরা অ্যাপ দিয়ে পরিমাপের যেকোনো একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করা যায়।
৫. কোনো বস্তুর আকার পরিমাপ করতে
কোনো বস্তুর আকার পরিমাপের জন্য আপনার হাতের কাছে হয়তো সবসময় রুলার বা পরিমাপক টেপ নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আইফোনের ক্যামেরা আপনাকে সহায়তা করতে পারে। আইফোন ১২ প্রো থেকে পরবর্তী প্রো মডেলগুলোতে লাইডার সেন্সর আছে, যার সাহায্যে কোনো বস্তুর নিখুঁত মাপ নেওয়া যায়। আইফোনের প্রি-ইনস্টলড ‘মেজার’ অ্যাপের সাহায্যে দূর থেকেও ক্যামেরার মাধ্যমে কোনো বস্তুর আকার পরিমাপ করা সম্ভব। এভাবে আপনি কারও উচ্চতাও মেপে নিতে পারবেন।
৬. ছোট কিছুকে বড় করে দেখতে
আইফোনে ম্যাগনিফায়ার নামে একটি প্রি-ইস্টলড অ্যাপ থাকে, যার সাহায্যে ক্যামেরাকে ম্যানিফাইংয় গ্লাসে পরিণত করা যায়। এই অ্যাপের সাহায্যে খুব ছোট লেখাকেও বড় করে দেখা যায়।