ফ্যাশন আইকন বা বিলাসিতার দ্রব্য হিসেবে আইফোন নিয়ে মাতামাতি কখনো কম হয় না, একথা সত্যি হলেও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের উপর আমাদের নির্ভরতা অন্য মাত্রার। নতুন ফোন কিনতে গেলে অনেকেই ভাবেন, আইফোন কিনবেন না অ্যান্ড্রয়েড কিনবেন?
লো এন্ড বা কম দামী ফোনের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড অনেক এগিয়ে থাকলেও হাইএন্ডে আইফোনকেই ওপরে রাখেন অনেকে। তবে ইদানিং স্যামসাংসহ অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতারাও বেশ কিছু উন্নত মডেলের ফোন বাজারে এনেছে।
আইফোনের ক্যামেরার ৭ বিকল্প ব্যবহার
আজকের আলোচনায় আইফোনের সাম্প্রতিক সংস্করণ আইওএস ১৬ অপারেটিং সিস্টেমে চালিত ‘আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স’ এবং সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তিতে চালিত অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ওএস এর স্যামসাং ‘এস২৩ আলট্রা’র তুলনা করা হয়েছে।
ডিসপ্লে
আইফোনের ডিসপ্লের আকার কিছুটা ছোট– ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চি। কিন্তু ওএলইডি প্যানেলের গুণগতমান অপেক্ষাকৃত ভালো। এতে সুপার রেটিনা এক্সডিআর ওএলইডি স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স বড় আকারের তুলনায় গুণগতমানের দিকে বেশি নজর দিয়েছে। অন্যদিকে স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে বড়, অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮ ইঞ্চি হওয়ায়, যারা একটু বড় ফোন ব্যবহারে বেশি স্বচ্ছন্দ, তাদের জন্য এটি ভালো হবে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ডাইনামিক এএমওএলইডি ২X ডিসপ্লে।
ক্যামেরা
আইফোনের মূল ক্যামেরা ১২ মেগাপিক্সেল ওয়াইড, স্যামসাংয়েরটি ১০৮ মেগাপিক্সেল ওয়াইড। দুটোর ক্ষেত্রেই ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা রয়েছে। দুটোতেই টেলিফটো ক্যামেরা থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে আইফোনের টেলিফটো ক্যামেরার মান কিছুটা এগিয়ে।
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সে আছে ট্রিপল-লেন্স রিয়ার ক্যামেরা সিস্টেম। অন্যদিকে এস ২৩র রয়েছে কোয়াড-লেন্স রিয়ার ক্যামেরা সিস্টেম। আইফোনের টেলিফোটো ক্যামেরাতে ফোকাল লেংথ বেশি এবং স্যামসাংয়ের টেলিফোটো ক্যামেরার রেজল্যুশন বেশি। আইফোনের মূল ক্যামেরায় স্যামসাংয়ের ক্যামেরা কিছুটা বেশি রেজল্যুশন থাকলেও স্যামসাংয়ের আলট্রাওয়াইড ক্যামেরার ফলে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। সব ধরনের লাইটিংয়েই যদি ভালো ছবি তুলতে ও ফ্রন্ট ক্যামেরায় ভালো ভিডিও রেকর্ড করতে চান– তাহলে এদিক দিয়ে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এগিয়ে থাকবে। আবার ল্যান্ডস্কেপ মোডে ছবি বা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির জন্য স্যামসাং এস২৩ আলট্রা বেশি উপযোগী।
ব্যাটারি
আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণে ব্যাটারি ৩০৯৫ এমএএইচ এবং স্যামসাংয়ের এই ফ্ল্যাগশিপ ফোনে রয়েছে ৫০০০ এমএএইচ এর ব্যাটারি। ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িতার দিক দিয়ে স্যামসাং এগিয়ে আছে। স্বভাবতই, একই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে এই ফোনটিতে বেশিক্ষণ চার্জ থাকবে। তাই বেশিক্ষণ ফোন ব্যবহার করলে স্যামসাং এস২৩ আলট্রা বেছে নেয়াই বিচক্ষণের কাজ হবে, যদি না সার্বক্ষণিক চার্জিংয়ের সুযোগ থাকে। তবে আইফোনের ব্যাটারিও খারাপ নয়। এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি কম সময়ে দ্রুত চার্জ দেয়া যায়। ৩০ মিনিটে এর ৫০ শতাংশ চার্জিং সম্পন্ন হয়।
স্টোরেজ
স্টোরেজের দিক দিয়েও অ্যান্ড্রয়েড আইফোনকে টেক্কা দিয়ে ফেলেছে বলা যায়। আইফোন প্রো ম্যাক্স এর স্টোরেজ ৬ জিবি, যেখানে স্যামসাং এস২৩ আলট্রার মেমোরি এর প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১২ জিবি। তাই আলাদা কার্ড স্লট ব্যবহার ছাড়াই বেশি বেশি ছবি-ভিডিও-ফাইল রাখতে চাইলে অ্যান্ড্রয়েডই ভরসা।
দুটো ফোনের মধ্যে অনেক কিছুই একরকম, তবে খুঁটিনাটি কিছু বিষয়ই একে অপরকে আলাদা করে এবং কিছু ক্ষেত্রে একটিকে অন্যটির চেয়ে এগিয়ে দেয়। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, গ্রাহকের নিজস্ব চাহিদা ও পছন্দের উপর ভিত্তি করেই তার নিজের জন্য ফোনটি বেছে নেবেন। ক্যামেরার গুণগত মান ও যেকোনো পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো উপযোগিতা চাইলে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স বেছে নেয়া দরকার। অন্যদিকে বড় ডিসপ্লে এবং ব্যাটারির স্থায়িত্বকে প্রাধান্য দিতে চাইলে স্যামসাং এস২৩ আলট্রা বেশি ভালো পছন্দ হবে।