স্মার্টওয়াচকে জনপ্রিয় করে তোলে অ্যাপল। ২০১৫ সালে অ্যাপলের প্রথম স্মার্টওয়াচ বাজারে আসে। তবে প্রথম স্মার্টওয়াচ বানানোর জন্য কৃতিত্ব অ্যাপেলকে দেওয়া যায় না। কারণ অ্যাপলের আগে আইবিএম প্রথম স্মার্টওয়াচ ‘ওয়াচপ্যাড’ তৈরি করে, যা ২০০১ সালের লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের কাট ডাউন ভার্সন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। আবার ২০১১ সালের ‘পেবেল’ নামের আরেকটি স্মার্টওয়াচ তৈরি করা হয়। পেবেলই সর্বপ্রথম স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নোটিফিকেশন দেখার সুবিধা দিয়েছিল।
স্মার্টওয়াচ নির্মাতারা নতুন নতুন ফিচার ও ফাংশন যুক্ত করার পাশাপাশি হালকা ও ব্যবহারকারী বান্ধব নকশা নিয়ে আসছে। অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টওয়াচপ্রেমীরা কী দেখার আশা করতে পারে তার কয়েকটি ঝলকসহ, সম্প্রতি বাজারে আসা সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ঘড়িগুলোর বিস্তারিত ফোর্বসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে তুলে ধরা হলো।
হুয়াওয়ে ওয়াচ ৪ ও হুয়াওয়ে ওয়াচ ৪ প্রো
শরীর থেকে রক্ত না নিয়েও গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে হুয়াওয়ের স্মার্টওয়াচ । অ্যাপলসহ অন্যান্য কোম্পানি অনেক বছর ধরে ডেভেলপ করলেও হুয়াওয়েই সর্বপ্রথম ফিচারটি বাজারে নিয়ে আসে। ডিভাইসটি সরাসরি রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ধারণ করে না। এটি অনেকগুলো স্বাস্থ্য পরিমাপের সূচক পর্যবেক্ষণ করে রক্তে উচ্চ ও নিম্ন শর্করার মাত্রা নির্দেশ করতে পারে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের আঙুল থেকে রক্ত নিয়ে শর্করার পরিমাণ নির্ধারণ করার যন্ত্রকে এটি প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু স্মার্টওয়াচটি ব্যবহারকারীকে হাইপারগ্লাইসেমিক বা হাইপোগ্লাইসেমিকের প্রাথমিক সতর্কতা দিতে পারে।
অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা
গত এক বছর ধরে শীর্ষ স্মার্টওয়াচের তালিকায় রয়েছে অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা। টাইটানিয়ামের গঠন, টেকসই ডিজাইন ও ৬০০ মিটার গভীর পর্যন্ত পানি প্রতিরোধের ব্যবস্থা এই ঘড়িকে অন্যান্য স্মার্টওয়াচ থেকে আলাদা করে। নতুন প্রযুক্তি অ্যাপলকে ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে সক্ষম করেছে। এর ফলে আগের মডেল চেয়ে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি হয়েছে। এটি খেলাধুলাপ্রেমীদের জন্য বাজারজাত করা হয়েছে। গারমিন ফেনিক্স ৭ বা পোলার গ্রিট এক্স প্রো মডেলগুলোও এই স্মার্টওয়াচের মত।
গুগল পিক্সেল ওয়াচ ২
দেহের স্ট্রেস শনাক্ত প্রক্রিয়ার জন্য গুগলের নতুন স্মার্টওয়াচে ফিটবিট সেন্স ২ ব্যবহার করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিটবিট গুগলের মালিকানাধীন তাই এই পদক্ষেপ কার্যক ভূমিকা পালন করবে। তাদের ফ্ল্যাগশিপ ঘড়িতে এই সহায়ক প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যাধুনিক ফিচার যোগ করতে পারবে। যদিও আগের সংস্করণে স্ট্রেস শনাক্তকরণ প্রযুক্তি প্রতিদিনের ঘাম, হৃৎস্পন্দন ও ত্বকের তাপমাত্রাসহ বেশ কয়েকটি পরিমাপের সূচক ব্যবহার করে। এই সূচকগুলো ব্যবহারকারীর স্ট্রেস লেভেল পরিমাপ করে সে অনুযায়ী সতর্কতা দিতে পারে।
অ্যামেজফিট চিটাহ
অ্যামেজফিট চিটাহ স্মার্টওয়াচে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চিটাহ জেপ অ্যাপের ডেটার মাধ্যমে এই এআই প্রশিক্ষণ সম্ভব হয়েছে। এই ঘড়িতে লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করবে। মনে হবে একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ ঘড়ির সঙ্গে যুক্ত আছেন। ব্যবহারকারীর নিজস্ব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম অনুসারে এআই ভিত্তিক পরামর্শ ও নির্দেশনাও এই ঘড়ির মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এই ঘড়িতে জিপিএস রাউটিং সুবিধা রয়েছে।
ফিটবিট এস ৪
এই বছরের শেষ দিকে ফিটবিট এস ৪ বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ফিটনেস ট্র্যাকারটি তৈরি করা হয়েছে। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সহ শিশুবান্ধব নকশা, কাস্টমাইজ করার সুবিধা ও আলাদা ফিটবিট অ্যাপ নিয়ে এই ঘড়ি তৈরি করা হবে। শিশুদের বার বার পড়ে যাওয়া ও ফেলে দেওয়ার স্বভাব থাকে। এই বিষয়ের কথা ভেবে ঘড়িটেকে অনেক মজবুতভাবে তৈরি করা হয়েছে।
সিটিজেন স্মার্ট টাচস্ক্রিন জেন ২
আইবিমের ওয়াটসন এআই ইঞ্জিন দিয়ে এই ঘড়ি তৈরি করা হয়েছে। এআইয়ের মাধ্যমে এই ঘড়ি ব্যবহারকারীর জীবনধারা, স্বাস্থ্য ও সক্রিয়তার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। নাসার তৈরি মেশিন লানিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর প্রতিদিনের তৎপরতা ও শক্তির স্তরের উঠানামা পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে। এই অ্যালগরিদম মহাকাশচারীর ডেটার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। এই ঘড়ি নির্দেশ করবে কোন সময়ে সক্রিয় থাকতে হবে ও কখন বিশ্রাম নিতে হবে।