বহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ফেসবুকের ব্যর্থতা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও তথ্য বেহাত হওয়া ঠেকাতে পারছে না সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে ফেসবুককে দুই ভাগে বিভক্ত করার কথা ভাবছেন সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশকালে বিশ্লেষকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
বিশ্লেষকদের প্রশ্নের জবাবে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ফেসবুককে দুই ভাগে বিভক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর একটি ‘পাবলিক’ সংস্করণ এবং অন্যটি ‘প্রাইভেট’ সংস্করণ হবে। ঢেলে সাজানো ফেসবুকের উভয় সংস্করণের সেবায় এনক্রিপ্টেট প্রযুক্তি ব্যবহূত হবে।
গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনার জন্য ফেসবুকে মার্ক জাকারবার্গের একক কর্তৃত্বকে দায়ী করা হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরামর্শক এবং তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে পড়ে ফেসবুক। এ ঘটনার পর কয়েকটি দেশের আইনপ্রণেতাদের সামনে শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল মার্ক জাকারবার্গকে।
ধারণা করা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান বিতর্ক এড়ানো এবং সত্যিকার অর্থে ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা জোরদারে ফেসবুককে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত একাধিক মেসেজিং সেবাকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা হতে পারে। এর ফলে একাধিক সেবা পরিচালনা করা সহজ হবে। অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে প্লাটফর্মটির সব সেবায় এনক্রিপশন প্রযুক্তি আনা হবে।
মার্ক জাকারবার্গ তার বক্তব্যে বলেন, আগামী পাঁচ বছর কিংবা তারও কিছু বেশি সময় তারা ফেসবুককে ঢেলে সাজাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। ফেসবুকের কার্যক্রম দুই ভাগে বিভক্ত করতে কমপক্ষে এক বছর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। পাশাপাশি ফেসবুকের ‘প্রাইভেট’ সংস্করণ চালুর আগে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, মেসেজিং সেবায় ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা এবং কনটেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের সেবা ব্যবহারকারীর তথ্যে ফেসবুকের প্রবেশাধিকার ঠেকাতে হলে বিকল্প টুল নিয়ে ভাবতে হবে। এটা ছাড়া ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। গ্রাহকবান্ধব সেবা দিতে ফেসবুক দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরই অংশ হিসেবে ফেসবুকের কার্যক্রম দুই ভাগে বিভক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের শুরুতে ফেসবুকের ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশ পায়। রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি তাদের একটি অ্যাপের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং তাদের বন্ধুদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এ ঘটনা প্রকাশের পর প্রথমে দায়সারা মনোভাব দেখিয়েছিল ফেসবুক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ফেসবুকের আরো কয়েকটি বড় তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পায়। বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে থাকা ফেসবুক গত বছর পুরোটা দুঃখ প্রকাশ করে কাটিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেসবুকের চলমান বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন ‘এফ৮’-এ ফেসবুককে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ফেসবুকের সক্রিয় হওয়ার মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হলে নিরাপত্তা ইস্যুতে ফেসবুকের স্বচ্ছতা বাড়বে। এর ফলে ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার হবে।