চাইলে এখন মুহূর্তের মধ্যে নতুন ডেটা বা তথ্য তৈরি করা যায়। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, তত বাড়ছে নতুন ডেটা তৈরির সুযোগ। স্মার্টফোনে এক ক্লিকে তোলা যায় নতুন ছবি। হাজারো ছবি, অডিও কিংবা টেক্সট বলতে গেলে বিনে পয়সায় তৈরি করা যায়। সফটওয়্যার রান করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেও তৈরি হয় প্রচুর ডেটা। সবমিলিয়ে ডেটার এখন কোনো অভাব নেই।
এতে একদিকে যেমন লাভ হয়েছে, তেমনি বিড়ম্বনাও কম তৈরি হয়নি। ডেটা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপ্রয়োজনীয় ডেটার পরিমাণ। কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের জন্য যে মেমোরি চিপ ব্যবহার করা হয়, তার ধারণ ক্ষমতা এখনও পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তা ছাড়া, অনেক বেশি ডেটা বা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার অবশ্য দরকারও হয় না। এ সমস্যা সামাল দিতে প্রতিদিন অনেক ফাইল—যাকে বলা যায় ডেটার আধার—ডিলিট করি আমরা। কখনো ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়। প্রশ্ন হলো, ডিলিট করা এসব ফাইল বা ডেটা যায় কোথায়?
কম্পিউটারের ফাইলগুলো মূলত শূন্য ও একের সমাহার। অর্থাৎ বিভিন্ন ফাইল বা ডেটা কম্পিউটারের মেমোরি চিপে শূন্য ও এক দিয়ে তৈরি সংখ্যার মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। মেমোরি চিপ আবার ভাগ করা থাকে ছোট ছোট বেশ কিছু অংশে। একেক অংশে থাকে এক বা একাধিক ফাইল। আমরা যখন কোনো ফাইল বা ডেটা ডিলিট করি, তখন মেমোরি চিপে তার স্থান পরিবর্তন হয়। কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের চেনা-জানা গন্ডির বাইরে মেমোরি চিপের অন্য কোনো স্থানে সরানো হয় ফাইলটি।
বিষয়টা আরেকটু খুলে বলা যাক। মেমোরি চিপের অনেকগুলো অংশ। প্রত্যেকটা অংশকে একটা করে বাক্স ধরতে পারেন। প্রতিটা বাক্সে রয়েছে অনেকগুলো খোপ—ডেটা রাখার জায়গা। এর মধ্যে কিছু বাক্স আমাদের বা ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই অংশটায় থাকা ডেটা বা ফাইলগুলো দিয়ে আমরা কাজ করতে পারি। এখানে ডেটা মানে, আগে যেমন বলেছি, পাশাপাশি লেখা অনেকগুলো এক ও শূন্য। এই এক ও শূন্যের সমাহারটি ডিলেট করে দিলেই কম্পিউটার সেটাকে সরিয়ে মেমোরি চিপের অন্য আরেকটি বাক্সের খোপে রাখে। এই বাক্সটা ব্যবহারকারী, অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই না। ফলে আমরা আর ফাইলটি খুঁজে পাই না। ভাবি, হারিয়ে গেছে। আসলে হারায়নি। শুধু জায়গা বদল করেছে।
তবে এই জায়গা বা বাক্সটা সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ এতে খোপের সংখ্যা সসীম। তাই নতুন নতুন ডিলিট করা ফাইল এসে খোপ পূর্ণ হতে থাকে। কিন্তু যখন আর নতুন ডেটা রাখার মতো খোপ থাকে না? তখন কম্পিউটার যে খোপটায় অনেক আগে ডিলিট করা ডেটা রেখেছিল, সেখান থেকে ওই ডেটাটা সরিয়ে তাতে নতুন ডেটা বা ফাইল রাখে। তার মানে কিন্তু ডেটাটা হারিয়ে কোথাও চলে গেল না। এর মানে, শূন্য ও এক দিয়ে লেখা আগের সংখ্যাটিকে বদলে দিয়ে সে নতুন সংখ্যা লিখেছে, ব্যস!
তবে ফাইলকে পুরোপুরি ডিলিট, অর্থাৎ মুছে ফেলাও সম্ভব। সে জন্য প্রয়োজন বিশেষ ডেটা ওয়াইপার সফটওয়্যার।
সে জন্যই ডিলিট করা এসব ফাইলকে আবার চাইলে রিকভার, অর্থাৎ পুনরুদ্ধার করা যায়। এমনকি রিসাইকেল বিন থেকে ডিলিট করলেও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। যতদিন কম্পিউটার পারে, সেই যে আরেকটি বাক্সে রেখে দেয়, সেখান থেকে। তবে এ জন্য দরকার শক্তিশালী রিকভারি সফটওয়্যার।
তবে ফাইলকে পুরোপুরি ডিলিট, অর্থাৎ মুছে ফেলাও সম্ভব। সে জন্য প্রয়োজন বিশেষ ডেটা ওয়াইপার সফটওয়্যার। সে ক্ষেত্রে সফটওয়্যারটি মেমোরি চিপে থাকা বাইনারি কোডের স্থান পরিবর্তন করার বদলে, শূন্য বা অর্থহীন কিছু মান বসিয়ে দেয়। ফাইলটিকে তখন আর কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনা যায় না। অনেকটা ক্লাসের বোর্ডে কোনোকিছু লিখে সেটা মুছে দেওয়ার মতো ব্যাপার। মুছে যাওয়া এসব ফাইলের জায়গায় আবার লেখা হয় নতুন ফাইলের কোড।