ডিজিটাল যুগে সব কার্যক্রমই ইন্টারনেটকেন্দ্রিক। বিল দেয়া শুরু করে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম, চাকরি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। তবে ভালো কিছুর সঙ্গে মন্দ দিকও থাকে। এর মধ্যে ইন্টারনেটে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয়া অন্যতম একটি ক্ষতিকর দিক।
ক্যামব্রিজ ডিকশনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে দেয়ার নির্মিত প্রোগ্রাম। তবে এখন আইফোন-অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যারের সংক্রমণ হয়। চলতি বছর অ্যাস্ট্রা জানায়, প্রতিদিন অন্তত ৫ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ম্যালওয়্যারের নতুন ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও ম্যালওয়্যার ক্ষতি করে। এএজির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একবার হলেও ম্যালওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে।
কম্পিউটারে ম্যালওয়্যারের সংক্রমণ শনাক্তের বেশকিছু চিহ্ন বা পদ্ধতি রয়েছে।
কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা বা গতি কমে যাওয়া: ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামের ধরন অনুযায়ী একেক রকমের সমস্যা হয়। এর মধ্যে একটি হলো কম্পিউটারের সাধারণ কাজের গতি কমে যাওয়া। কম্পিউটার চালু ও বন্ধ হতে দেরি হওয়া, সফটওয়্যার চালু না হওয়া বা সময় বেশি লাগা কিংবা বারবার অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রধান সমস্যা। তবে অন্য কারণে কম্পিউটারের গতি কমে যেতে পারে। এজন্য হার্ডড্রাইভ ডিফ্র্যাগ করা, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে ফেলাসহ অন্যান্য বিষয় দেখতে হবে।
অস্বাভাবিক নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভিটি: সাইবার হামলা প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি হ্যাকাররাও নতুন পদ্ধতির সন্ধান করছে। তারা প্রতিনিয়ত আরো শক্তিশালী সফটওয়্যার তৈরি করছে, যেগুলো সহজেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা এড়াতে সক্ষম। সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি প্রুফ পয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, নেটওয়ার্কে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লে এর মাধ্যমে ম্যালওয়্যার আক্রমণ পরিচালনার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ থেকে সুরক্ষায় এলএমজি সিকিউরিটি ওয়্যারশার্ক বা আরগাসের মতো ফ্রি নেটওয়ার্ক মনিটরিং টুল ইনস্টলের পরামর্শ দিয়েছে।
অপ্রত্যাশিত পপ-আপ ও বিজ্ঞাপন: গুগল ক্রোমের তথ্যানুযায়ী, এক্সটেনশন ব্যবহারে ব্রাউজারের সেটিংসে পরিবর্তন আসে। এসব এক্সটেনশন বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে। কিন্তু ২০২০ সালে থার্ড পার্টি ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহারের কারণে ৩০ লাখ ব্যবহারকারী ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়। কোনো সময় এক্সটেনশনের ভেতরেই ম্যালওয়্যার থাকতে পারে। অ্যাভাস্টের গবেষকদের মতে, ইন্টারনেটে প্রচলিত বেশকিছু প্লাটফর্মের জন্য নির্ধারিত ২৮টি এক্সটেনশনে ম্যালওয়্যারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সিস্টেম সেটিংসে পরিবর্তন: প্রয়োজনে অনেক সময় উইন্ডোজের সেটিংসে পরিবর্তন আনতে হয়। তবে ম্যালওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকাররা সেটি পরিবর্তন করলে তা অবশ্যই ক্ষতিকর। ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে মূলত হ্যাকাররা কম্পিউটারে প্রবেশের গুপ্ত দরজা তৈরি করে। এছাড়া ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে এনক্রিপশন সার্টিফিকেট রুট করা সম্ভব।
সিপিইউর ব্যবহার বৃদ্ধি: ম্যালওয়্যারের সংক্রমণ হলে ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ কারণে তখন সিপিইউর ব্যবহার বেড়ে যায়। লাইফওয়্যারের তথ্যানুযায়ী, কোনো অ্যাপ চালু না থাকলে সিপিইউর ব্যবহার হবে ১-৫ শতাংশ। এছাড়া বেশকিছু ম্যালওয়্যার কোনো নোটিফিকেশন না দিয়েই সিপিইউ ব্যবহার করতে পারে। উইন্ডোজ কম্পিউটারে কনট্রোল, শিফট ও এসকেপ বা ইএসসি একসঙ্গে চাপলে টাস্ক ম্যানেজার থেকে পারফরম্যান্সে যাওয়া যাবে। সেখানে সিপিইউর ব্যবহার দেখা যাবে।
অজানা-অচেনা ফাইল বা প্রোগ্রাম: ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে আক্রমণ চালানোর জন্য ডিভাইসে বেশকিছু সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় ডেস্কটপে অনেক অচেনা সফটওয়্যার চোখে পড়তে পারে। তাই এসব বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।