ভিডিও গেম খাতে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে চীন সরকার। এর অংশ হিসেবে নতুন নিয়ম যুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে গেমে অর্থ ও সময় ব্যয়ের বিষয়ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বিধিনিষেধের পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে ইন-গেম কেনাকাটা সীমিত করার পাশাপাশি গেম আসক্তি কমানোকেই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। খসড়া আইনটি বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন গেমিং বাজারের জন্য আরেকটি বড় আঘাত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা খাতটি এখনো আগের বিধিনিষেধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এছাড়া যেসব গেমের কনটেন্ট জাতীয় ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালে বেইজিং প্রথম গেমিং খাত নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়। সে সময় বলা হয় ১৮ বছরের কম বয়সীরা শুধু শুক্রবার, সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে এক ঘণ্টা গেম খেলতে পারবে। তবে বর্তমানে যে নিয়ম কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সেটি আরো কঠোর হতে যাচ্ছে। গেমিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনপিপিএ) জানায়, অনলাইন গেমগুলো এমন কোনো পুরস্কারের প্রচার করতে পারবে যার কারণে অতিরিক্ত সময় গেমে ব্যয় করতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন গেমে লগইন করার জন্য বা কোনো কিছু কেনার জন্য আলাদা অর্থ ব্যয় করা লাগবে এমন কোনো বিষয়ও রাখা যাবে না।
মর্নিংস্টারের একজন বিশ্লেষক ইভান সু বলেন, ‘গেম থেকে এসব বিষয় সরিয়ে নেয়া হলে তা দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং ইন-অ্যাপ কেনাকাটায় ব্যয় ও কোম্পানির আয় কমিয়ে দেবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে গেম ডেভেলপারদের বাধ্য হয়ে ডিজাইন ও আয় কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে।’ নতুন নিয়ম আরোপের মাধ্যমে গেমে ব্যবহারকারীদের আগ্রাসী বা ভিন্ন আচরণের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয়ার বিষয়টিও চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
গেমিং খাতে বিশ্বের অন্যতম বাজার হচ্ছে চীন। আর আয়ের দিক থেকে এ খাতে শীর্ষে রয়েছে টেনসেন্ট। এশিয়ার বাজারে কোম্পানিটি নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে গেম স্টুডিওতে বিনিয়োগও করেছে। এনপিপিএর ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। টেনসেন্ট গেমসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিগো ঝ্যাং জানান, ২০২১ সালে কিশোর ও তরুণদের সুরক্ষায় বেইজিং যে উদ্যোগ নিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে গেম খেলার এবং ইনগেম ব্যয়ের পরিমাণও অনেক কমেছে।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গেমিং কনসালট্যান্ট ড্যানিয়েল ক্যামিলো বলেন, ‘টেনসেন্ট ও নেটইজ উভয়েরই অনেক ফ্রি গেম রয়েছে। এসব গেমে অর্থ ব্যয় করে জেতাও সম্ভব এবং গেমাররাও ব্যয়ের বিষয়ে আগ্রহী।’ তিনি বলেন, ‘নতুন করে আরো বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সেগুলো মনিটাইজেশন বা আয়ের মডেলগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং কোম্পানিগুলোকে নতুন মডেল সাজাতে হবে। এছাড়া কিছু গেম হয়তো স্টোর থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হবে।’
ড্যানিয়েল ক্যামিলোর আশা, নতুন নিয়ম আরোপ করা হলেও টেনসেন্ট ও নেটইউ উভয় কোম্পানিই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। তবে ছোট গেম কোম্পানিগুলোর বিষয়ে তিনি এমন কিছুর আশা প্রকাশ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে চীনের গেমিং খাতে ছাঁটাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে। নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তা মাঝারি ও ছোট গেম ডেভেলপারদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।’