দেশি পণ্য শব্দের সাথে ইতোমধ্যে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত থাকলেও দেশি পণ্যের সিলেবাস নিয়ে আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে দেশি পণ্যের সাথে সিলেবাসই বা কেন আর কেনই বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন বিষয়ে কর্মশালার উদ্যোগ? বিস্তারিত জানার আগে জেনে নেই দেশি পণ্যের সিলেবাস কি?
বাংলাদেশে উৎপাদিত সকল প্রকার পণ্যগুলোকে একসাথে একটি কোর্সের আওতায় এনে ও তা থেকে আরোও ভিন্নধর্মী কোর্স শুরু করা বা যতগুলি কোর্সের কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয়, সেই কন্টেন্টগুলি নিয়ে একটি দিকনির্দেশনা তৈরি করা। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে কোথায় এই কোর্সের পদ্ধতি শুরু করা বা কারা এই কন্টেন্ট গুলি পড়বে বা আর কেনই বা দেশি পণ্য নিয়ে জানতে হবে। পুরো আর্টিকেল থেকে দেশি পণ্যের সিলেবাস নিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা তৈরি হবে বা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশি পণ্যের সিলেবাস নিয়ে এধরণের কর্মশালা ছাত্রছাত্রী, দেশের মানুষের জন্য ও দেশের অর্থনীতিতে কিভাবে ভুমিকা রাখতে পারে?
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশীয় পণ্যের সিলেবাস বিষয়ক কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাএীরা নিজের দেশের পণ্য নিয়ে জানবে। অনেকেই নিজ জেলার পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানলেও বাকি ৬৩ জেলা পণ্য নিয়ে খুব বেশি ধারণা বা জানাশুনা থাকে না। দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের সেমিনারের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন শিল্পের পণ্য নিয়ে জানবে। এরফলে তারা পড়াশোনা শেষ করে শুধুমাত্র চাকরী নির্ভর না হয়ে নিজেদের সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা দিয়ে নিজ দেশের পণ্য নিয়ে নিজের উদ্যোগ শুরু করতে পারবে। ভবিষ্যতে দেশীয় পণ্য নিয়ে রিসার্চ বা গবেষণার কাজ শুরু করতে পারে। বিজনেস সেক্টরে দেশীয় পণ্য নিয়ে সৃজনশীল দক্ষতার মাধ্যমে তরুনরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজ করতে পারে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এমন সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যের প্রচার বৃদ্ধি পাবে। তরুন সমাজের মাঝে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তরুনরা তৈরি করতে পারবে কর্মসংস্থান, যা দেশের অর্থনীতিতে দেশীয় পণ্যের সিলেবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশের সকল জেলার উৎপাদিত দেশীয় পণ্যের সঠিক তথ্য জানানো ও এর প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্য নিয়ে ২০২০ সালে ইক্যাবের (ই-কমার্স অস্যোসিয়েসন অব বাংলাদেশ ) সাবেক এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইডিসির (ই- কমার্স ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার ) এ্যাডভাইজর রাজিব আহমেদের আইডিয়াতে ইডিসির সহ-সভাপতি নিগার ফাতেমা দেশীয় পণ্যের সিলেবাস তৈরি করেন৷ একজন দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা হিসেবে দেশি পণ্য নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশি পণ্যের সিলেবাসের রচনা করেন নিগার ফাতেমা৷ এই সিলেবাসের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণভাবে এই দিকনির্দেশনা তরুণ ছাত্রছাত্রী ও সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় AIUB( American International University – Bangladesh) এর Department of MIS ( Management Information System) ও Department of Management & HRM এবং ইডিসির ( ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল “Deshi Ponno Syllabus and Business Sector of Bangladesh”- শীর্ষক কর্মশালা । পুরো আয়োজনের প্রস্তুতকারক হিসেবে ছিলেন দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের রচয়িতা ইডিসির সহ-সভাপতি ও আরিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা৷
গত ৩ ও ৪ই ডিসেম্বর (রবি ও সোমবার) বিকেলে দুইদিনব্যাপী উক্ত প্রোগ্রামটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়৷
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশের ডাইরেক্টর অব বিবিএ প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. রেজবিন নাহার, এম আই এস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) ডিপার্টমেন্ট এর লেকচারার আজমেরি সুলাতানা, ডিপার্টমেন্ট অব ম্যানেজমেন্ট & এইচ আর এম (ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অ্যান্ড হেড এর ড. মো: আফতাব আনোয়ার, কাকলী তালুকদার ( প্রেসিডেন্ট, ই- কমার্স ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার ) , রাজিব আহমেদ ( সাবেক এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ই-কমার্স অস্যোসিয়েসন অব বাংলাদেশ )
এছাড়াও অনলাইনে আয়োজিত এমন প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের পাশাপাশি সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাসহ প্রায় পঞ্চাশ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন।
প্রোগ্রামের বিশেষ অতিথি কাকলী তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, ” বর্তমানে যে ডালার ক্রাইসিস হচ্ছে সেটা দিয়ে কিন্তু বুঝা যাচ্ছে যে দেশি পণ্য আমাদের কতটা দরকার। দেশি পণ্য নিয়ে আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে আমরা যতো উচ্চ শিক্ষিত হই না কেনো বাংলাদেশে ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত দেশি পণ্যের ব্যাপারে কোথাও তেমন কিছু তথ্যনেই। আমরা আসলে জানিইনা জেলা ভিত্তিক কি ধরনের পণ্য রয়েছে? জি আই পণ্য কোন কোন গুলো রয়েছে? স্টার্টআপ ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য কোন কোন পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করলে কেমন সুবিধা হতে পারে?
দেশি পণ্যের সিলেবাস যদি ঠিকমতো প্রতিষ্ঠিত করানো হয় এবং ইউনিভার্সিটিগুলোতে তা পাঠ্য হয়, গবেষণা হয়,তাহলে আমরা জানবো বাংলাদেশের সকল জেলার পণ্য এবং সেগুলোর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সম্পর্কে। ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রথম থেকেই অন্যভাবে চলার চেষ্টা করছে।আমরা দেশি পণ্যের সাথে আছি,দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে রয়েছি এবং আমি খুবই আনন্দিত যে,এরকম একটি কাজে ইডিসি জড়িত। ইডিসি থেকে দেশি পণ্যের যেকোনো ভালো উদ্যোগের বিশেষ করে অনলাইনে যেকোনো কিছুতেই আমরা থাকার চেষ্টা করি, সেজন্য AIUB এর সাথে এই সেমিনারের আয়োজনে আমরা গর্বিত অংশীদার। ”
উক্ত সেমিনারের বিশেষ অতিথি রাজিব আহমেদ বলেন, “ইউনিভার্সিটি গুলোতে দেশি পণ্যের সিলেবাস নিয়ে অনেক ইভেন্ট হওয়া দরকার। চলমান ডলার ক্রাইসিস মোকাবেলার জন্য আসলে দেশি পণ্যের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।“
এছাড়াও দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের প্রণেতা ও প্রোগ্রামের প্রস্তুতকারক হিসেবে এমন আয়োজনের বিষয়বস্তু নিয়ে জানতে চাইলে নিগার ফাতেমা তার বক্ত্যব্যে বলেন, ” এটি এক নতুন ধারার সেমিনার ছিল যেখানে ছাএ-ছাত্রীরা দেশীয় পণ্য নিয়ে জানতে পেরেছে এবং এর মাধ্যমে কিভাবে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।
সেমিনারের উপস্থিত ছাত্র ছাত্রীদের ইতিবাচক ফিডব্যাকের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি তারা তাদের পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজের দেশের পণ্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী আছে।দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের এইরকম আরও সেমিনার আয়োজন করা খুব প্রয়োজন ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে। এতে করে দেশীয় পণ্যের ক্যাইস স্টাডি,রিসার্চ যেরোকম তৈরি হবে, পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা আগ্রহ নিয়ে কাজ করবে নিজ দেশের পণ্য নিয়ে । দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে ভবিষ্যতের তরুন,তাই আমি চাই দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের মাধ্যমে তারা নিজ দেশকে চিনুক এবং নিজের মেধা দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ুক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এম আই এস (ম্যনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) ও বিজনেস অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মেজবাহ এইচ নাহিদ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সমাপনী বক্তব্যে ধন্যবাদ প্রদানে বলেন, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি আকারের উদ্যোগের ডিজিটাইজেশন প্রচেষ্টা এবং যারা দেশীয় পণ্য কেনা এবং প্রচারের সাথে যুক্ত আছে তাদের সাধুবাদ জানাই। এছাড়াও, ‘ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’-এর প্রশংসা করেন। তিনি এই অসামান্য উদ্যোগের জন্য তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের অমূল্য পরামর্শের জন্য ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট মিসেস কাকলী তালুকদার এবং সমস্ত আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।“
এছাড়াও উক্ত কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হলো এই সিলেবাস অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশের পণ্যগুলো নিয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি চালু করা। এটি করতে হয়ত সময় লাগবে, তবে যদি এটি করা যায় তাহলে কিছু ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষার্থী আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলোর পরিচিতি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা ও কাজ করবে৷ যারা এ নিয়ে কাজ করবে তাদেরকে এদিকে শেখাতে সাহায্য করবে একদল অভিজ্ঞ শিক্ষক। দেশীয় পণ্য নিয়ে রিসার্চ, বই, প্রকাশনা নিয়েও অনেক কাজ হবে যদি দেশি পণ্যের সিলেবাস সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়৷
দুইদিনব্যাপি এই কর্মশালায় পুরো প্রোগ্রামের সঞ্চালনায় ছিলেন মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া ( প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ই-কমার্স ক্লাব) এবং টেকনিক্যালে অংশের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ার শেরপুরের স্বত্বাধিকারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন। এতে তিনটি করে মোট ছয়টি সেসনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন আয়োজন থেকে উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে প্রথম দিনে দেশীয় গহনা নিয়ে ‘আবায়া স্টোরি’- এর স্বত্বাধিকারী সিরাজুম মুনিরা , দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য নিয়ে ‘ইডিসির সহ-সভাপতি, দেশি পণ্যের প্রণেতা ও আরিয়া’স কালেকশনের’ স্বত্বাধিকারী নিগার ফাতেমা, দেশীয় ও হোমমেড খাবার নিয়ে ‘সহজ সাধ্যের’ স্বত্বাধিকারী সৈয়দা ক্যামেলিয়া রহমান এবং কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে দেশীয় তাঁত পণ্য নিয়ে ইডিসির ট্রেজারার ও ‘তেজস্বী’-এর স্বত্বাধিকারী উম্মে সাহেরা এনিকা, দেশীয় অর্থকরি ফসল নিয়ে ‘সেবুতি’স ড্রেস কর্নার’- এর স্বত্বাধিকারী আরজেনা হক সেবুতি এবং ‘খাদি বিডির’ স্বত্বাধিকারী প্রতাপ পলাশ দেশের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ নিয়ে সেসন পরিচালনা করেন।
দেশীয় খাদ্যশস্য, গহনা, খাবার, তাঁত পণ্য, অর্থকরি ফসল এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ নিয়ে দুইদিনে দেশীয় এমন পণ্য নিয়ে দক্ষ প্রশিক্ষকগণ প্রত্যেকে চল্লিশ মিনিটের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। উক্ত বিষয় বস্তুর আলোচনার প্রেক্ষাপটে কর্মশালায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে উৎপাদিত পণ্য এবং এ নিয়ে ই-কমার্স সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা বিস্তারিত প্রাথমিক ধারণা পেয়েছে।
এতক্ষন তো জানলাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশীয় পণ্যের সিলেবাস নিয়ে সেমিনার বা ওয়ার্কশপের মাধ্যমে কিভাবে আমরা দেশের পণ্য নিয়ে জানতে পারি, দেশের তরুণ প্রজন্ম কিভাবে এই সেক্টেরে ক্যারিয়ার গঠনের প্রস্তুতি নিতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে এই ধরণের কার্যক্রমের ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে। পাঠক আসুন এবার জেনে নিই উক্ত কর্মশালার নির্ধারিত বিষয়ে সেসন পরিচালনাকারী কি বলছে সেই দক্ষ প্রশিক্ষকগণ?
গোলা ভরা ধান বাংলাদেশের গ্রাম বংলার ঐতিহ্য এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দেশের খাদ্যশস্যের এই সেক্টর নিয়ে আমরা তরুণ প্রজন্ম কতটুকুই জানি? দেশীয় খাদ্যশস্য নিয়ে শুধু কৃষকই নয় এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে পারে শিক্ষিত তরুণ সমাজও ।
এ নিয়ে দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের প্রণেতা ও প্রশিক্ষক নিগার ফাতেমা বলেন,” বাংলাদেশের কৃষি খাতে খাদ্যশস্য প্রধান ফসল।যেরকম ধান,গম,সবজি তৈলবীজ , ডাল ইত্যাদি। বাংলাদেশের উর্বর মাটিতে খাদ্যশস্যের ভালো ফলন হয় আসছে।আমাদের সেমিনারে একটি সেসন ছিল খাদ্যশস্য নিয়ে। খাদ্যশস্য উৎপাদনের বিভিন্ন দিক যেরকম আবহাওয়া, মাটি,চাহিদা,কোন কোন জেলা,নানা রকম জাত,স্বাদ ও আকারের ভিন্নতা আলোচনা করা হয়।খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরনের সরকারের নীতিমালা,যোগান বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুন নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল।এর পাশাপাশি খাদ্যশস্য নিয়ে বিভিন্ন বিজনেস সেক্টর ই-কমার্স, রপ্তানি, স্টার্টআপ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়
এই সেসনের মাধ্যমে আমাদের দেশের খাদ্যশস্য নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ধারণা দেওয়া হয়।এতে করে তারা নিজ দেশের বিভিন্ন রকমের খাদ্যশস্য নিয়ে জেনেছে এবং তাদের উৎসাহ জেগেছে। ভবিষ্যতে তারা তাদের ক্যারিয়ার গঠনে এই তথ্য গুলো কাজে লাগাতে পারবে।“
প্রশিক্ষক সিরাজুম মনিরা দেশীয় গহনা নিয়ে আলোচনা করেছেন । গহনাতে উদ্যোগ নিতে গেলে কি করা দরকার সে বিষয়ে তিনি বলেন,” দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দেশীয় গহনা বা অলংকার। আমাদের দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস এর মতোই গহনা শিল্পেও আমাদের অবস্থান অনেক পুরনো। ঐতিহাসিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের যেসব যায়গায় প্রথম অলংকার পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বগুড়ার মহাস্থানগড় যেখানে খ্রীস্টপূর্ব ৪৫০ থেকে ৩৭০ বছর আগের। একটি শিল্পের বিকাশ তখনই সম্ভব যখন তার সঠিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক পটভূমি গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকে এবং বর্তমান যুগের চাহিদার সাথে তার একটি সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। দেশীয় পণ্যের সিলেবাসের মাধ্যমে গহনার আদি ইতিহাস ও বর্তমান সম্ভাবনাকে এক করে উপস্থাপন করা এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের গহনা নয়ে ক্যারিয়ার গঠনে আগ্রহী করে তোলা ও তাদের সঠিক তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করাই এই সেসনের মুল উদ্দ্যশ্যে।“
পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিশুকালে স্কুলের গণ্ডিতে খাদ্যের নাম মুখস্থ করানো হত আর এক দিক থেকে ভোজন রসিক মানুষের কাছে খাবার মানেই লোভনীয় ব্যপার। প্রতিদিনের খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আয়োজনে বাংলাদেশের খাবারেও রয়েছে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ছোয়া। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে যান্ত্রিক জীবন আর ব্যাস্ততার মাঝে হোমমেড খাবার কে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের ই-কমার্স খাত।
দেশীয় খাবার ও এ নিয়ে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে নানা বয়সী উদ্যোক্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে ‘সহজ সাধ্যের’ স্বত্বাধিকারী সৈয়দা ক্যামেলিয়া রহমান জানান,”পূর্বে আমাদের দেশ নিয়ে অনেকের মনে হতাশা থাকলেও এখন আর সেই হতাশা মনে হয় আমাদের মধ্যে আর নেই। কারন আমাদের দেশ সব সময় সব দিক থেকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ। সেদিক থেকে দেশি খাবারেও আমরা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। দেশীয় খাবার বলতে মূলত আমরা সব ধরনের খবারকেই বুঝে থাকি যা খেয়ে আমরা জীবনধারন করি। সেটা হতে পারে রান্না করা খাবার বা কোন দোকানের খাবার বা খাদ্যশস্য, মাছ, পশুপাখি। সব কিছুই আমাদের দেশীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত।
দেশি পণ্যের সিলেবাসে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় খাবারের তালিকা করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা বা উপজেলার খাবার রয়েছে সেখানে। এই খাবার গুলো শুধু আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে না, এই খাবার গুলোর সাথে আমাদের দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সর্বোপরি দেশের সামাজিক অবস্থান ও অর্থনীতি জড়িয়ে আছে।
শিক্ষার্থীরা যত বেশি আমাদের দেশীয় খাবার সম্পর্কে জানবেন তত বেশি তারা এই খাবার গুলোকে প্রচারের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। নিজেরা জানবেন, অনদেরকে জানাবেন। কোন জেলার কোন খাবার পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব এমন কি দেশের বাহিরেও ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব তা নিয়ে নতুন প্রজন্ম চিন্তা করবে। স্বপ্ন দেখবে। তা হতে পারে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, কন্টেন্ট তৈরি করে, ভিডিও বানিয়ে, ছবি তুলে, ব্লগের মাধ্যমে, বিভিন্ন ভাবে। আমাদের দেশীয় খাবার আমাদের দেশের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য কে আমরা আমাদের মধ্যে ধারন করবো ছড়িয়ে দিবো পুরো বিশ্বে। অনেকে স্বপ্ন দেখবে দেশীয় খাবার নিয়ে কাজ করার, নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন। তাহলেই আমাদের এই দেশীয় খাবার গুলো এক সময় দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখবে।“
মৌলিক চাহিদার খাদ্যের পরেই আসে বস্ত্রের কথা। পোশাক বা বস্ত্র খাতেও বাংলাদেশি পণ্যের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। কর্মশালায় দেশীয় তাঁত পণ্য নিয়ে প্রশিক্ষক, ইডিসির (ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার) কোষাধ্যক্ষ, ঢাকাপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতাও তেজস্বীর স্বত্বাধিকারী উম্মে সাহেরা এনিকা জানান,” বাংলার প্রাচীন শিল্পের মধ্যে তাঁত শিল্প অন্যতম। তা যুগের পর যুগ ধরে টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। তাঁত বস্ত্র মিশে আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। লাখ লাখ তাঁতির প্রচেষ্টায় আমরা ব্যবহার করতে পারি বৈচিত্রময় পোশাক। তাঁতিরা বংশপরম্পরায় বুনে আসছে তাঁত পোশাক। তাঁত বস্ত্রের প্রচার ও ব্যবহারে মাঝে কিছুটা মলিন হলেও ইন্টারনেট আর ফেসবুকের কারণে তা ফিরে পেতে শুরু করেছে অতীত সোনালী দিনের গৌরব।
বর্তমানে তাঁত বস্ত্র নিয়ে অনলাইনে কাজ করছেন শিক্ষিত উদ্যোক্তারা। তারা ক্রেতার রুচি ও চাহিদা বুঝে নিয়ে আসছেন রঙ ও নকশায় বৈচিত্র। ই-কমার্সের ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই শিক্ষিত এবং তাদের চাহিদাও ভিন্ন। এই ক্রেতা শ্রেণি এবং ব্যবসার প্রসারে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা তাঁত বস্ত্র নিয়ে জানতে পারে, লেখাপড়া করতে পারে, ক্রেতার চাহিদা বুঝে তাদের ব্যবসা ও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারে।
তাঁত বস্ত্র নিয়ে কাজ করতে চাইলে পণ্যের সোর্সিং করা সহজ এবং তাঁতিদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সহজেই নতুন নতুন নকশার রূপ দেওয়া সম্ভব। তাঁত বস্ত্র ব্যবহার করে মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো থাকার কারণে ক্রেতা পাওয়াও সহজ।“
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল বলতেই সবার আগে মনে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট শিল্পের কথা। দেশীয় অর্থকরি ফসল নিয়ে প্রশিক্ষক আরজেনা হক সেবুতি জানান,”বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান এবং কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশের প্রায় ৮০%-৮৫% লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে অর্থকরী ফসল উৎপাদন হয় অনেক বেশি এবং অর্থকরী ফসল রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট,চা,তামাক ছাড়াও আখ,তুলা,পান ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদিত পাটের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট উৎপাদিত হয়।পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলই শুধু নয় বরং আমাদের দেশের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হচ্ছে পাট। চা আমাদের দেশের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের ১% জিডিপি আসে চা থেকে। বাংলাদেশে মোট ১৬৭ টি চা বাগান রয়েছে এবং এই চা শিল্পের সাথে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক যুক্ত রয়েছে।এছাড়াও আখ,পান ও তুলা উৎপাদন করে দেশের স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জনের ফলে দেশের অর্থনৈতিক আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে । ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের অর্থকরী ফসল সম্পর্কে জানা উচিত কেননা আজকের ছাত্র-ছাত্রীরাই ভবিষ্যতের নতুন প্রজন্ম যারা কৃষির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশাপাশি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে। এখন থেকেই যদি ছাত্র-ছাত্রীরা অর্থকরীফসল ও কৃষি সম্পর্কে বিস্তারিত জানে ও কনটেন্ট তৈরি করে তাহলে ভবিষ্যতে নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।“
‘মাছে ভাতে বাঙালী’ অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যাকটি । দেশের সেই মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ নিয়ে প্রোগ্রামের প্রশিক্ষক প্রতাপ পলাশ বলেন, “ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রানীজ আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করন তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস ও প্রানী সম্পদ এর গুরুত্ব অপরিসীম।
আমরা এই পর্বে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি মৎস ও প্রানী সম্পদ খাতের বর্তমান অবস্থা, রপ্তানি আয়ে ও জিডিপিতে এই খাতের অবদান, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা সমূহ নিয়ে। এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করার ফলে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের এই অপার সম্ভাবনাময় মৎস ও প্রানী সম্পদ খাত সম্পর্কে জানতে পারছেন, ফলে এই খাতের সুযোগ, নিজেদের আগ্রহ ও সামর্থ্য বিবেচনায় ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।
উদ্যোক্তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে এর এই সেতু তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর সংক্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।“
কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের স্থানীয় পণ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তারা কীভাবে তাদের উন্নত ক্যারিয়ারের জন্য ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। কর্মশালাটি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ বুঝতে সাহায্য করেছে। কর্মশালা জুড়ে তাঁত কারখানা/টেক্সটাইল শিল্প, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, হস্তনির্মিত স্থানীয় গহনা, কৃষি খাদ্য শস্য, কৃষি নগদ ফসল, খাদ্য/ঘরে তৈরি খাদ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ছাত্ররা উদ্যোক্তাদের যাত্রার অভিজ্ঞতা, সেইসাথে পুরো প্রোগ্রাম জুড়ে তাদের সাফল্যের গল্প। এছাড়াও সেসন শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন উত্তর অংশ নিয়ে সবকিছু মিলিয়ে দেশি পণ্য নিয়ে প্রাণবন্ত একটি কর্মশালা ছিল এটি যা দেশের ইকনোমি সেক্টরের উন্নতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ব বিদ্যালয় পর্যায়ে অত্যন্ত প্রয়োজন।