প্রযুক্তির জগতে ২০২৩ বছরটি নানা কারণে আলোচনায় থাকবে। বিল গেটস স্বয়ং ২০২৩ সালকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনন্য এক বছর বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর তাই ধারণা করা হচ্ছে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ইতিহাসের শুরুর বছর হিসেবে আলোচনায় থাকবে ২০২৩ সাল। আগামী বছরের প্রযুক্তি দুনিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে নিজেদের ভাবনা জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ২০২৪ সালের প্রযুক্তি দুনিয়ায় কোন কোন বিষয় আলোচনায় থাকবে, তার ধারণা প্রকাশ করেছে।
এআই আরও উড়বে, কিন্তু গতি কমবে
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান মনে করেন, এআইয়ের দৌড় স্থির নয়। ২০২৪ সালে শক্তিশালী সংস্করণের চ্যাটজিপিটি আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। গত নভেম্বর মাসে সফটওয়্যার নির্মাতাদের একটি সম্মেলনে ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান ধারণা দেন যে ২০২৪ সালে নতুন চমক আসছে। তবে সিসিএস ইনসাইট নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিশ্লেষক বেন উড বলেন, ২০২৪ সালে এআইয়ের দুনিয়ায় আমরা কিছুটা স্থিরতা দেখতে পাব। যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা ধীর হবে। আমরা মনে করি, কিছু বাধার কারণে এআইয়ের উন্নয়নের গতি কিছুটা কমে আসবে। একটি এআই সিস্টেম পরিচালনা করা খুবই ব্যয়বহুল। প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি ও ব্যয়বহুল কম্পিউটার চিপের প্রয়োজন হয়, এসব বেশ কম পরিমাণে সরবরাহ হচ্ছে বলে বাধা তৈরি হবে। এ ছাড়া নানা আইন-কানুনের মারপ্যাঁচে এআইয়ের বর্তমান উন্মাদনা কিছুটা ধীর হবে ২০২৪ সালে। পুরো বিষয়টিকে ঈগলের আকাশে ওড়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ঈগল যখন নিচের দিকে ওড়ে, তখন বেশি ডানা ঝাপটায়, কিন্তু যতই ওপরে উঠতে থাকে, ততই ডানা স্থির করে গতি কমিয়ে দেয়। এআইয়ের মধ্যে তেমনই স্থিরতা দেখা যাবে।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চাহিদা বাড়বে
শ্মিট অটোমোটিভ রিসার্চের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের রাস্তায় ১০ লাখতম বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নামবে। অর্থাৎ জার্মানির পরে যুক্তরাজ্যে ১০ লাখতম বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হবে। তবে চাহিদা থাকার পরও ২০২৪ সাল বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের জন্য আরেকটি কঠিন বছর হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ফোর্ড, জিএম ও টেসলা সবাই তাদের বর্তমান বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন কমানোর পাশাপাশি কারখানা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্সিডিজ-বেঞ্জ বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারকে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বলে বর্ণনা করেছে। দামের যুদ্ধ ও সরবরাহপদ্ধতিতে সমস্যার জন্য নানা সংকট দেখা যাচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পে। বিশ্লেষকেরা পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন না। গাড়ির বাজার বিশ্লেষক ম্যাথিয়াস শ্মিট জানান, ২০২৪ সাল হবে ইউরোপজুড়ে ইভি বিক্রির জন্য একটি স্থবির বছর। জার্মানি ও নরওয়ের মতো শক্তিশালী বাজারের গতি কমবে ২০২৪ সালে।
মানব আকৃতির রোবট
মানব আকৃতির রোবট বা হিউম্যানয়েড রোবট ২০২৪ সালে নানা কারণে সংবাদের শিরোনাম হবে। ইলন মাস্কের টেসলার প্রকৌশলীরা ‘অপ্টিমাস’ নামের একটি মানব আকৃতির রোবট তৈরি করছেন। এই রোবট শিগগিরই বিভিন্ন কারখানার কাজে যুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। এ বছরের জুলাই মাসে ইলন মাস্ক ২০২৪ সালে অপ্টিমাস টেসলা কারখানায় কাজ শুরু করবে বলে ঘোষণা দেন। ইলন মাস্ক বলেন, ‘এই রোবট আমরা প্রথমে আমাদের নিজস্ব কারখানায় আগামী বছরের (২০২৪ সালে) কোনো এক সময় ব্যবহারের চেষ্টা করব।’
মানব আকৃতির রোবট তৈরির জন্য টেসলাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমাজন এরই মধ্যে নিজেদের গুদামে মানব আকৃতির রোবট পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। ‘ডিজিট’ নামের সেই রোবট মানুষের মতোই পণ্য এক জায়গা থেকে নিয়ে অন্য জায়গায় রাখতে পারে। অ্যাজিলিটি রোবটিকস এই রোবট তৈরি করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর সাধারণ ব্যবহারকারী ও গ্রাহকেরা ডিজিট রোবটের মাধ্যমে নিজেদের বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন। কানাডা স্যাঙ্কচুয়ারি এআই ‘ফিনিক্স’ নামের একটি রোবট তৈরি করেছে। এই রোবট ব্যাগ গুছিয়ে রাখার মতো বেশ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারে। ২০২৪ সালে ফিনিক্স আরও কাজ করতে পারবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওজন কমাতে প্রযুক্তি
ওষুধশিল্পে ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর তাই ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করছে। ওয়েগোভি ব্র্যান্ডের ওষুধের কারণে ওষুধ নির্মাতা নভো নরডিস্ক ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কয়েক শতকোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর ট্যাবলেট হিসেবে ওজন কমানোর ওষুধ বাজারে মিলবে। অন্যদিকে এলি লিলির ওষুধ মাউঞ্জারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগামী বছর অনুমোদন পেতে পারে ওষুধটি। ফাইজারও নিজেদের ওজন কমানোর ট্যাবলেট বাজারজাতের অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করছে।