স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক থেকে তরুণদের কাছে গেমিং অন্যতম। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরো বাড়বে। ব্যবহারকারীদের কথা বিবেচনায় স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড না আইফোন—কে সেরা এ নিয়ে বিতর্ক চলমান। গেমিংয়েও এখন এ প্রশ্ন উঠছে। বর্তমানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিখ্যাত স্টুডিও নির্মিত গেমের পাশাপাশি পুরনো গেমও খেলা যায়। কিন্তু গেমার তথা ব্যবহারকারীদের মনে কে সেরা—এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গেমিং খাতে আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড উভয় প্লাটফর্মেরই শক্তিশালী ও দুর্বল দিক রয়েছে। তাই গেমার তথা ব্যবহারকারীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্লাটফর্মের সক্ষমতা নির্ভর করবে। এজন্য দুটি প্লাটফর্ম সম্পর্কেই জানতে হবে এবং এজন্য বেশকিছু বিষয়ও রয়েছে।
গেম লাইব্রেরি: গেম খেলার জন্য মোবাইল পছন্দের জন্য প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো গেম লাইব্রেরি। আর এদিক থেকে আইফোন বরাবরই এগিয়ে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের স্টোরগুলোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য না থাকলেও ভিন্নতা রয়েছে। প্রতি বছর অ্যাপল তিন থেকে চারটি আইফোন উন্মোচন করে থাকে। যে কারণে ডেভেলপারদের জন্য গেম ডেভেলপ সহজ হয়। অন্যদিকে বছরে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমচালিত শতাধিক ডিভাইস বাজারজাত করা হয়। ফলে সব ডিভাইসের জন্য গেমের উন্নয়ন সময়সাপেক্ষ হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে অ্যাপ ব্যবহার: অ্যান্ড্রয়েডের অন্যতম বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যবহারকারীরা যেকোনো উৎস বা ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড এবং ব্যবহার করতে পারে। এদিক থেকে অন্যতম উদাহরণ ফোর্টনাইট গেম। অ্যাপলের সঙ্গে বিরোধ থাকায় এপিক গেমস অ্যাপস্টোরে গেমটি ছাড়তে নারাজ। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা চাইলে এটি ডাউনলোড করে খেলতে পারবে।
ভালো গেম নির্মাতা কোম্পানির সাপোর্ট বা সহায়তা: এত দিন পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে অ্যাপলে বিখ্যাত গেম নির্মাতা কোম্পানিগুলোর সাপোর্ট যুক্ত হচ্ছে। আইফোন ১৫ প্রোতে ডেথ স্ট্রান্ডিং ও রেসিডেন্ট ইভিল ফোরসহ বিভিন্ন গেম খেলার সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। কোম্পানিটির দাবি, এ১৭ প্রো চিপসেটে বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে কনসোল গ্রেড গেমগুলো খেলা যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপল যদি আইওএসে আরো গেম টাইটেল যুক্ত করতে পারে তাহলে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য পকেট সাইজ কনসোল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
ডিভাইসে বিভিন্ন সুবিধা ও ফিচার: গেমিং কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো স্মার্টফোনে লম্বা সময় গেম খেলার জন্য বিভিন্ন সহায়ক ফিচার প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে কুলিং সিস্টেম, গেমপ্যাডের মতো ট্রিগার ও অতিরিক্ত পোর্ট। এদিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড অনেক এগিয়ে। এসব ফিচারযুক্ত ডিভাইস হিসেবে আসুস রগ ফোন ৭ আল্টিমেট প্রচলিত। এতে ১৬৫ হার্টজের অ্যামোলেড ডিসপ্লে, হেপটিক ট্রিগার এমনকি একটি এক্সট্রা কুলিংয়ের জন্য আলাদা ফ্যানও রয়েছে।
এছাড়া রেডম্যাজিক ৮এস প্রোও এগিয়ে রয়েছে। এতে বিল্ট ইন কুলিং ফ্যান ও ৬ হাজার মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের বড় ব্যাটারি রয়েছে। গেমিং ফোন কিনতে না চাইলেও ব্যবহারকারীদের জন্য স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রাসহ বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসও রয়েছে। যেগুলো গেমিংয়ের জন্য তৈরি করা না হলেও এর স্পেসিফিকেশন বা বৈশিষ্ট্যের কারণে গেম খেলায় উন্নত অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। আইফোনে যে গেম খেলা যাবে না বা গেম চলবে না তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। তবে গেমিংয়ে ভালো অভিজ্ঞতা চাইলে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেই ভরসা রাখতে হবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
সার্বিকভাবে গেমিং খাতে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের আলাদা সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। তবে গেমিংয়ের জন্য আইফোনকেই এগিয়ে রাখছেন প্রযুক্তিবিদরা। প্রথমত, আইওএসের নিজস্ব গেম লাইব্রেরি রয়েছে, যেখান থেকে পছন্দের গেম খুঁজে নেয়া যাবে। এছাড়া অ্যাপলের ডিভাইসগুলোয় ট্রিপল এ ক্যাটাগরি (প্রচলিত ও বিখ্যাত ডেভেলপার কোম্পানি নির্মিত গেম) গেমের সাপোর্ট বাড়াচ্ছে। পকেট সাইজ কনসোল হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকাতেই হয়তো অ্যাপল এ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এর মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে আইফোন। তবে যারা ডু ইট ইওরসেলফ (ডিআইওয়াই) গেমিংয়ে আগ্রহী এবং গেম খেলায় ভালো হার্ডওয়্যার সাপোর্ট চান তাদের অ্যান্ড্রয়েডকেই বেছে নিতে হবে।
অ্যান্ড্রয়েডে গেমিং অভিজ্ঞতার উন্নয়নে আলাদা ফিচার পাওয়া যাবে। যার মধ্যে অতিরিক্ত ইউএসবি-সি পোর্ট অন্যতম। এছাড়া আধুনিক কুলিং সিস্টেম, অতিরিক্ত গেমিং বাটন বা ট্রিগার ও বড় ব্যাটারিও সহায়ক। সাইড লোডিংয়ের সুবিধা থাকা ইমুলেটর ব্যবহার করে গেম খেলার সুবিধাও অ্যান্ড্রয়েডকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছে।