প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের সঙ্গে বিভিন্ন খাতও ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে মোবাইল নেটওয়ার্ক খাতে ফাইভজি এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), মেশিন টু মেশিন (এমটুএম) লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) আলোচনায় রয়েছে। এসবের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইটি টেলিকমে প্রকাশিত খবরে বলা হয় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কার্যক্ষমতা ও উৎপাদন বাড়লেও নেটওয়ার্ক এবং ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে এ বিষয়েও দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
প্রযুক্তি বিশারদরা জানান, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে নতুন যুগে একাধিক চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। এর মধ্যে নেটওয়ার্কগুলোকে সাইবার হামলা ও প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত রাখা অন্যতম। এমতাবস্থায় সাইবার নিরাপত্তায় পেশাদারদের চাহিদা বাড়লেও এ খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২২ সালের মধ্যে বছরে সাইবার নিরাপত্তা বিঘ্নকারী ঘটনার গড় পরিমাণ ছিল ১৩ লাখের বেশি। বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে ভারতের স্মার্টফোন বাজার দ্রুতবর্ধনশীল। এছাড়া সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক থেকে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। ভালো অবস্থানে থাকলেও সাইবার নিরাপত্তা খাতে চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের হার তুলনামূলক কম।
সার্বিক হিসেবে সাইবার নিরাপত্তা খাতে ভারত মাত্র ৬ শতাংশ কর্মসংস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। টিমলিজ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ খাতে দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও চাহিদার মধ্যে ব্যবধান ৩০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। অন্য এক প্রতিবেদনে ডেল টেকনোলজিস জানায়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে সাইবার হামলার ঘটনা বেশি। এ কারণে দেশগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে ডাটা ব্যবহার করতে পারছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংগঠনিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে এসব অঞ্চলে সাইবার নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে।
সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিওএআই) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ফাইভজি নেটওয়ার্ক গ্রহণ করার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা খাতে নতুন করে ঝুঁকি তৈরি হবে। এর মধ্যে আইওটির নিরাপত্তা ঝুঁকি, তথ্যের সুরক্ষা ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি অন্যতম। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ঝুঁকি মোকাবেলা ব্যবস্থার পরীক্ষণসহ সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব।
সাইবার নিরাপত্তা বিশারদ ও প্রযুক্তিবিদদের মতে, ফাইভজি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে বিপুল সংবেদনশীল তথ্য তৈরি হবে। এসব তথ্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হবে এবং ক্লাউডে সংরক্ষিত হবে। আর এখানে সাইবার হামলা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে তাই গতিশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানি ও এন্টারপ্রাইজ বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তায় বড় বিনিয়োগ করছে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে ডিজিটাইজেশনে প্রবেশ করতে হলে আরো উদ্যোগ নিতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
সাইবার নিরাপত্তা খাতে এআইয়ের অপব্যবহারও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে নতুন সতর্কবার্তা দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির (এনআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, সাইবার হামলাকারীরা এআইকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং (এমএল) সিস্টেমে ম্যানিপুলেশনের নানা ঝুঁকির দিক তুলে ধরে সতর্ক করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, এটি পয়জনিং নামে পরিচিত। অর্থাৎ ভুল ও আক্রমণাত্মক কমান্ড দেয়ার মাধ্যমে এআইকে বিভ্রান্ত করা এবং ক্ষতিকর কাজ সম্পাদনে বাধ্য করা।
অ্যাডভারসারিয়াল মেশিন লার্নিং: এআইয়ের ওপর সাইবার আক্রমণ এবং প্রশমনের শ্রেণীবিন্যাস ও পরিভাষা শিরোনামে গবেষণাটি নির্ভরযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে এনআইএসটির প্রচেষ্টার অংশ ছিল। গবেষণাটির মূল লক্ষ্য এআই ডেভেলপার ও ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ এবং তার কার্যকর প্রশমনের কৌশল সম্পর্কে জানানো। যদিও বর্তমানে কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, তবে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষা দিতে সক্ষম নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যাপোস্টল ভাসিলেভ বিভিন্ন আক্রমণের কৌশল মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন, যা সব এআই সিস্টেমের জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি আক্রমণ মোকাবেলার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও বিকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। চালকবিহীন গাড়ি পরিচালনা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের মতো কাজে বর্তমানে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু গবেষকদের মতে, এআইয়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ওয়েবসাইট ও জনসাধারণ যেসব তথ্য ব্যবহার করে এআই তার কাজ সম্পাদন করে। সেসব তথ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে। অর্থাৎ ভুল তথ্য এআইয়ের কাজের ফলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম।