ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বর্তমান সময়ে যদি আমরা আমাদের বোনদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি, তারা যদি দক্ষতা অর্জনের পর স্টার্ট-আপ শুরু করার জন্য সিড মানি (পূঁজি) পায়, আর প্রযুক্তির জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার একটি ল্যাপটপ পায়, তাহলে তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে আত্মনির্ভরশীল হবে কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে। তাদের কারও ওপর নির্ভর হতে হবে না।
প্রতিমন্ত্রী আজ নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে হার পাওয়ার প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত নারায়ণগঞ্জ সদর, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলার নারী আইটি সেবাদাতা, নারী ফ্রিল্যান্সার ও নারী কল সেন্টার এজেণ্ট ক্যাটাগরিতে মোট ২৬৫ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ল্যাপটপ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমি আজকে আসার সময় আমি নারায়ণগঞ্জে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজটি পরিদর্শন করে এসেছি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটা দৃশ্যমান হবে এবং আগামী ৩ বছরের মধ্যে ১০ তলা বিল্ডিং হবে। তখন সেখান থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ হাজার ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান হবে। নারায়ণগঞ্জের মাটি থেকে বসে তারা বড় বড় দেশের আউটসোর্সিং করবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তারা নেতৃত্ব দেবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাকুরীর মাধ্যমে একটি পরিবারের স্বচ্ছলতা আসে, কিন্তু একজন উদ্যোক্তা চাকুরী প্রদানের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে আস্তে পারে। একারণেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেশের সকল তরুণ-তরুণীদেরকে জব ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের নির্দেশনায় আমরা সকলের কাছে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছি, যার ফলে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সরকারের ২৫০০ সেবা আমরা ডিজিটালাইজড করেছি। বিগত ১৫ বছরে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ফ্রিল্যান্সার, ৫০ হাজারের বেশি কল সেন্টার এজেন্ট, ৫০ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে কাজ করছে এবং সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী নারী প্রশিক্ষণাথীদেরকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ল্যাপটপ নিয়ে দেশের কল্যাণে তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে নিজেদের আরো ১০ জন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আহ্বান জানান।
বিশ্ব নারী দিবসে তিনজন বিশেষ নারীর কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি এখানে এর জন্য তিনজন নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। একজন হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জন্য আমি এখানে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আরেকজন নারী হলেন আমার মা যিনি আমার চোখে পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। আরেকজন হলেন আমার অর্ধাঙ্গিনী। সে নিজে ছাত্র জীবনে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেছিল। ২০০১ সালে যখন মিথ্যা মামলায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে তখন আমার স্ত্রী আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আজ নারী দিবসে এ তিন নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে অন্যায় হবে।
উল্লেখ্য, উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সিংকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৪৩টি জেলার সদর উপজেলাসহ মোট ৩টি উপজেলা ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলাসহ মোট ১৩০টি উপজেলায় তথ্য প্রযুক্তিতে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে চারটি ক্যাটাগরিতে (নারী ফ্রিল্যান্সার, নারী আইটি সেবাদাতা, নারী ই-কমার্স প্রফেশনাল ও নারী কল সেন্টার এজেন্ট) মোট ২৫,১২৫ জন নারীকে ০৫ (পাঁচ) মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ও ১ মাসব্যাপী মেন্টরশীপ সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া সকল সফল প্রশিক্ষণার্থীদের একটি করে ল্যাপটপ প্রদান করা হবে। বর্তমানে ১৩০ টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৪০৮ টি ব্যাচে ৮৪৬০ জনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান এমপি, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোস্তফা কামালসহ আরও অনেকে।
পরে প্রতিমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ সক্ষমতা সেবা GBon”জীবন” এর শুভ উদ্বোধন করেন এবং অনলাইনে ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার বনশ্রী এলাকার ৪ হাজার, বাবু বাজার এলাকায় ৬ হাজার, উত্তরা এলাকায় ১৮ হাজার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১ হাজার, জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় ১০ হাজার, শেরে বাংলানগর এলাকায় ১৬ হাজার, রমনা এলাকায় ১২ হাজার, খিলগাঁও এলাকায় ৮ হাজার, নীলক্ষেত এলাকায় ১৪ হাজার, মিরপুর এলাকায় ১৫ হাজার, গুলশান এলাকায় ১০ হাজার, গেন্ডারিয়া এলাকায় ৩ হাজার, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৩ হাজার, দিয়াবাড়ী এলাকায় ৬ হাজার, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৮ হাজার, মগবাজার এলাকায় ২০ হাজার, বারিধারা এলাকায় ৬ হাজার এবং মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৬০০, গাজীপুর জেলায় ৪ হাজার, নরসিংদী জেলায় ২ হাজার ৩০০, মানিকগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার, টাঙ্গাইল জেলায় ৩ হাজার, রাজবাড়ী জেলায় ২ হাজার ৩০০, শরিয়তপুর জেলায় ৩ হাজার, ফরিদপুর জেলায় ৩ হাজার, মাদারীপুর জেলায় ৩ হাজার, কিশোরগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৬০০ উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ সক্ষমতা সেবা GBon”জীবন” এর শুভ উদ্বোধন করেন।