বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে পৃথিবী। আগামী সোমবার (৮ এপ্রিল) সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে চাঁদ। ফলে কিছু সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার বিভিন্ন অঞ্চল অন্ধকারে ঢেকে যাবে। আর এই সময় আকাশে বিশেষ রকেট উৎক্ষেপণ করবে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা।
নাসার ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় তারা চাঁদের ছায়ায় তিনটি সাউন্ডিং রকেট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। সাউন্ডিং রকেট হলো গবেষণার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বহনকারী রকেট। ৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার বিভিন্ন অংশে ১১৫ মাইল-প্রশস্ত এলাকাজুড়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এছাড়া পুরো আমেরিকা মহাদেশ থেকে আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।
সূর্যগ্রহণের সময় আলো ও তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার কীভাবে প্রভাবিত হয় তা পরীক্ষা করা হবে রকেটগুলোর মাধ্যমে। আয়নোস্ফিয়ার হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তর যা বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসে ভরা। রকেটগুলো সূর্যগ্রহণের সময় তৈরি হওয়া আয়নোস্ফিয়ারের ব্যাঘাতগুলি অধ্যয়ন করবে। অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পারটার্বেশনস অ্যারাউন্ড ইক্লিপস পাথ (এপিইপি) নামে সাউন্ডিং রকেটগুলো ভার্জিনিয়ার ওয়ালপস দ্বীপে অবস্থিত নাসার রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে পাঠানো হবে।
তিনটি রকেট একসঙ্গে উৎক্ষেপণ করা হবে না। ওয়ালপস দ্বীপ থেকে সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে, সেই মুহূর্তটি হবে বিকেল ৩টা ৩৩ মিনিট। গ্রহণটি শুরু হবে ৪টা ৬ মিনিটে, আর শেষ হবে ৪টা ৩৩ মিনিটে।
সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে ছাড়া হবে প্রথম রকেটটি, মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয়টি এবং গ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে তৃতীয় রকেটটি পাঠানো হবে। তিনটি রকেট আয়নোস্ফিয়ারের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে।
মিশনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফ্লোরিডার এমব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্সের অধ্যাপক আরোহ বরজাতিয়া। তিনি জানান, এই রকেট উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য হলো সূর্য গ্রহণকালে চারটি ছোট বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, ঘনত্ব ও তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলো পরিমাপ করার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনগুলো বোঝা।
তিনি বলেন, ‘এটি (আয়নোস্ফিয়ার) একটি বিদ্যুতায়িত অঞ্চল যা রেডিও সংকেতগুলোকে প্রতিফলিত করে এবং সংকেতগুলোর প্রতিসরণও ঘটায়। সংকেতগুলো এর মধ্য দিয়ে চলাচলের সময় স্যাটেলাইট যোগাযোগও প্রভাবিত হয়।’
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর সূর্যগ্রহণের সময় একইভাবে তিনটি রকেট আয়নোস্ফিয়ারে পাঠানো হয়েছিল। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে রকেটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়। সেসময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো সফলভাবে ফিরিয়ে আনা হয়। এবার সেগুলোকেই মেরামত করে আরও বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হবে।