বাংলাদেশিদের জন্য নীতি লঙ্ঘন করে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটায় রমরমা জুয়ার বিজ্ঞাপন চলছে। জুয়ার এসব বিজ্ঞাপনে বছরে ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা। গতকাল বুধবার ফ্যাক্টচেক সংস্থা ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়।
মেটার বিজ্ঞাপন নীতিতে বলা আছে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যেসব গেমিং অ্যাপ রয়েছে সেগুলো তারা ব্যতিক্রম হিসেবে ধরে। কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতারা মেটার নীতি লঙ্ঘন করে টাকা দিয়ে খেলার প্রচারণাও চালাচ্ছে। আর এসব বিজ্ঞাপনগুলো চিহ্নিত করতে পারছে না প্রযুক্তি জায়ান্টটির স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশনসহ জুয়ার বিজ্ঞাপন দৃশ্যমান হয়, এমন সব ওয়েবসাইট ব্লক করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপরও অনলাইন বেটিং বা জুয়ার প্রচারণা থেমে নেই। ডিসমিসল্যাব মাত্র এক দিনেই মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে বাংলাদেশিদের টার্গেট করে তৈরি করা ৪ হাজার জুয়ার বিজ্ঞাপনের খোঁজ পেয়েছে। বিজ্ঞাপনগুলোতে বোর্ড গেমস, স্লট, ক্যাসিনো, স্পোর্টস বেটিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, তাদের এসব সার্চ বাংলায় ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইংরেজিতে সার্চ করলে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপনের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
গবেষণায় বলা হয়, প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপনের জন্য সর্বনিম্ন এক ডলার করে করে নিচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি। ইম্প্রেশন, বিজ্ঞাপন কৌশল এবং প্লেসমেন্টের মতো কারণগুলোর কারণে এই খরচ কম-বেশি হয়। বছরে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপনে আনুমানিক ব্যয় হয় ১৫ কোটি টাকা।
ডিসমিসল্যাব বলছে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) চলাকালে জুয়াড়িরা বেশি সক্রিয় থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ‘আইপিএল ২০২৪’ লিখে সার্চ দিলে জুয়ার নানা বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়।
মেটার বিজ্ঞাপন লাইব্রেরিতে জুয়ার ৫০টি বিজ্ঞাপনে তারকাদের ছবি দেখা গেছে। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে সাকিব আল হাসানের ছবি। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কিংবা ডিপফেক টুলের মাধ্যমে সাকিব আল হাসানসহ মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড়দের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলোতে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার অ্যান্ড সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, অনলাইন জুয়া আমাদের দেশে ভালোভাবে ছড়িয়েছে। এখন গার্মেন্টসশ্রমিক, রিকশাচালকদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেও এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের কিছু গেটওয়ে থাকলেও এসব বিজ্ঞাপন বন্ধ করা কঠিন। কারণ, এসব বিজ্ঞাপন কম্পিউটার ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই এগুলো বন্ধে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আর এজন্য মেটার মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদেরও এসব বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সময় লাগছে। কারণ, তাদেরও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত আপডেট হতে হচ্ছে।