চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুপক্ষের এ উত্তেজনায় আরেক দফা ঘি ঢালতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহেই তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন। মূলত জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ ক্রয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাধা দিতেই আদেশটি জারি করা হচ্ছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ সুগম হয়ে উঠবে। ট্রাম্প এমন এক সময় নির্বাহী আদেশে সই করার প্রস্তুতি নিয়েছেন, যখন সব দেশকে আশ্বস্ত করতে ‘নো-স্পাই’ চুক্তি সইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করতে যাওয়া নির্বাহী আদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা দেশ অথবা কোম্পানির নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নির্বাহী আদেশ জারির বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু বারবার তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, কার্যাদেশ জারির প্রক্রিয়া আবারো বিলম্বিত হতে পারে।
নির্বাহী আদেশে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্টের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলবে এমন জরুরি মুহূর্তে এ আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টকে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ করে কার্যাদেশটি জারি করা হবে এবং কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হবে।
নির্বাহী আদেশটি এমন এক সময় কার্যকর হতে যাচ্ছে, যখন কিনা বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে শুল্কযুদ্ধ চরমে পৌঁছেছে। চীনের বাণিজ্য নীতিকে নিয়মবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই প্রথম এ যুদ্ধ শুরু করা হয়।
স্মার্টফোন নির্মাতা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের তৈরি যন্ত্রাংশ চীন সরকারের গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহূত হতে পারে এমন ধারণা থেকেই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ বারবারই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নির্বাহী আদেশ কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে হুয়াওয়ের ব্যবসার পথ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও প্রতিবেদনটি নিয়ে হুয়াওয়ে, হোয়াইট হাউজ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে হুয়াওয়ের তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করছে না। এছাড়া মিত্র দেশগুলোকেও কোম্পানিটি থেকে দূরে থাকার চাপ দিচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য তৈরি হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশকে ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত আগস্টে ট্রাম্প সরকারি কাজে হুয়াওয়ে, জেডটিইসহ চীনা কোম্পানিগুলোর তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি বিল সই করেন। জানুয়ারিতে মার্কিন প্রসিকিউটররা ওয়াশিংটনে হুয়াওয়ের দুটি শাখার বিরুদ্ধে টি-মোবাইল ইউএস করপোরেশনের ব্যবসার গোপন তথ্য চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া ইরানের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে হুয়াওয়ে এবং প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যখন যুক্তরাষ্ট্র গুপ্তচরবৃত্তির উদ্বেগ ছড়িয়ে দিচ্ছে, তখন সবাইকে আশ্বস্ত করতে ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘নো-স্পাই’ চুক্তি সইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান এ কথা জানান।
লন্ডনে হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা ‘নো-স্পাই’ চুক্তি সইয়ে আগ্রহী। আমাদের তৈরি যন্ত্রাংশগুলো যে কোনো গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে তৈরি নয়, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতেই এ চুক্তি করব আমরা।’
এদিকে নিজেদের ফাইভজি অবকাঠামোতে হুয়াওয়ের তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরো সময় নিয়েছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।