সাইবার হামলা মোকাবেলায় নতুন চিপ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও এমআইটি-আইবিএম ওয়াটসন এআই ল্যাব। এটি হেলথ ফিটনেস ট্র্যাকারসহ অন্যান্য এআই-নির্ভর ডিভাইসে থাকা তথ্যের সুরক্ষা স্তর বাড়িয়ে দেবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
সঠিকভাবে ফিটনেস ট্র্যাকিং ফিচারসহ হেলথ মনিটরিং অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অবস্থার তথ্য সংরক্ষণ করে। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অ্যাপগুলো মেশিন লার্নিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া এগুলো স্মার্টফোন ও কেন্দ্রীয় সার্ভারের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিপুল তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে।
একটানা যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি অ্যাপগুলোর প্রক্রিয়ার গতিকে ধীর করে দেয়, যার পরিপ্রক্ষিতে ব্যাটারি লাইফ বা ব্যাকআপের সময় কমে আসে। এজন্য প্রকৌশলীরা প্রায়ই মেশিন লার্নিং এক্সিলারেটর ব্যবহার করেন, যা বিশেষ হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। কিন্তু এ ধরনের এক্সিলারেটর ডিভাইসে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও আর্থিক তথ্যের মতো সংবেদনশীল তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়ায়।
ঝুঁকি কমাতে এমআইটি ও এমআইটি-আইবিএম ওয়াটসন এআই ল্যাবের গবেষকরা একটি মেশিন লার্নিং এক্সিলারেটর তৈরি করেছেন, যা দুটি প্রচলিত সাইবার হামলার থেকে নিরাপদ। তাদের তৈরি করা নতুন চিপটি লার্জ এআই মডেলগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা বজায় রেখে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম।
গবেষণা দলটি চিপে বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন এনেছে, যা ডিভাইসের গতি না কমিয়েও শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এছাড়া অতিরিক্ত এ সুরক্ষা ব্যবস্থা ডিভাইসের কম্পিউটিং সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। গবেষকরা জানান, চালকবিহীন ড্রাইভিং, অগমেন্টেড বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো এআই অ্যাপগুলোর চাহিদা এ সুরক্ষিত অ্যাক্সিলারেটর চিপ থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক মৈত্রেয়ী অশোকের মতে, চিপটির ব্যবহার ডিভাইসকে কিছুটা বেশি ব্যয়বহুল করার পাশাপাশি কম বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। গবেষণায় ডিভাইসটি পরীক্ষার জন্য গবেষকরা সাইড-চ্যানেল ও বাস-প্রবিং নামের দুটি সাইবার হামলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লক্ষাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তারা কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী, সাইবার অপরাধীরা স্বাস্থ্যসেবা খাতকে লাভজনক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এমন সময় এ নতুন চিপ প্রকাশের বিষয়টি প্রকাশ্যে এল।
মেডক্রিপ্টের প্রধান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যাক্সেল উইর্থ মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবায় সাইবারনিরাপত্তা অন্যান্য খাতের মতো এখনো উন্নত নয়। ক্লাউডভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি ফার্ম ইন্ডাসফেস পরিচালিত একটি জরিপ অনুসারে, অর্ধেকের বেশি স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-২১ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য চুরি ও ফাঁসের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ সালের মধ্যে গড়ে র্যানসমওয়্যারের ঘটনা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ২০২১ সালে র্যানসমওয়্যারের হামলায় সর্বোচ্চ মুক্তিপণ ছিল ২৪ কোটি ডলার। ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ডলার। গবেষকরা মনে করছেন, এমআইটির নতুন এ চিপ সংবেদনশীল ডাটা পরিচালনাকারী অ্যাপ ও ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুর্বলতা মোকাবেলায় সহায়তা করবে।