প্রযুক্তি খাতে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পদক্ষেপের একদম সামনে রয়েছে এর আগে একাধিক বাধার সম্মুখীন হওয়া হুয়াওয়ে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে ও অন্যান্য চীনা টেলিযোগাযোগ কোম্পানির ওয়্যারলেস যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সনদ পাবে না। বরাবরের মতোই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) কর্মকর্তারা।
চলতি মাসে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট নেয়ার পরিকল্পনা করেছে এফসিসি। প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হলো মার্কিন বাজারে অন্য দেশের ওয়্যারলেস ডিভাইসকে অনুমোদন সনদ দিয়ে থাকে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বাইরের কোম্পানির মাধ্যমে প্রভাবিত না হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সার্টিফিকেশন বডি ও বিভিন্ন টেস্ট ল্যাব।
এদিকে গত সপ্তাহে হুয়াওয়ের টেস্ট ল্যাবকে যন্ত্রাংশ অনুমোদন প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়ে অনুমতি দেয়নি এফসিসি। মূলত প্রোগ্রামটি যুক্তরাষ্ট্রে ওয়্যারলেস ডিভাইস বিক্রির অনুমোদন পেতে কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করে।
এ নতুন প্রস্তাব পাস হলে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে হুয়াওয়েসহ এফসিসির তালিকায় থাকা অন্য সংস্থাগুলো স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করার প্রয়োজনীয় পথ দেখাবে।
এফসিসির চেয়ারম্যান জেসিকা রোজেনওয়ার্সেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রাংশ অনুমোদন প্রোগ্রাম ও এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা যেন নিরাপত্তা ও সরবরাহ চেইনের ঝুঁকির মাধ্যমে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সক্ষম হন এটি এফসিসিকেই নিশ্চিত করতে হবে।’
হুয়াওয়ে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত ল্যাব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু সে স্বীকৃতির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল। এফসিসির কাছে ফের অনুমোদিত ল্যাব হিসেবে স্বীকৃতির অনুরোধ জানিয়েছে হুয়াওয়ে। তবে মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন এ সংস্থা। এ বিষয়ে হুয়াওয়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো মন্তব্য দেয়নি।
২০২২ সালের নভেম্বরে হুয়াওয়ে ও জেডটিইর নতুন টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশের অনুমোদন নিষিদ্ধ করেছিল এফসিসি। এর পাশাপাশি হাইতেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন, হাংঝু হিকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি এবং ঝেজিয়াং ডাহুয়া টেকনোলজি কোম্পানির টেলিকম অ্যান্ড ভিডিও নজরদারির যন্ত্রপাতি অনুমোদন নিষিদ্ধ করেছিল।
এছাড়া ২০২২ সালে এফসিসি রাশিয়ার ক্যাসপারস্কি ল্যাব, চায়না টেলিকম করপোরেশন, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ, প্যাসিফিক নেটওয়ার্কস করপোরেশন ও চায়না ইউনিকমকে এ নিষেধাজ্ঞা তালিকায় যুক্ত করে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি রয়েছে—এমন কোম্পানিকে এ তালিকায় রাখা হয় বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে আইনটি প্রণয়ন করে দেশটি।
এদিকে হুয়াওয়ে ও হিকভিশনকে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২০ সালে হুয়াওয়ে ও জেডটিইকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এফসিসি। এ ঘোষণার ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলো এসব কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৮৩০ কোটি ডলারের সরকারি তহবিল আর সংগ্রহ করতে পারবে না। এফসিসি কমিশনার ব্রেন্ডন কার বলেন, ‘মার্কিন বাজারের জন্য আনা ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করে, এমন ল্যাব ও সার্টিফিকেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে এ প্রস্তাব।’