বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত তথ্য ও প্রযুক্তি। এই খাতকে শিল্পে পরিণত করার কথা অনেকদিন ধরেই বলছেন তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, আইসিটি খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন তিনি। সে জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সদ্যই যাত্রা শুরু করতে যাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক আইসিটি উদ্যোক্তাদের শত কোটি টাকার জামানতবিহীন ঋণ দেবেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে লম্বা সময় ধরে কাজ করা এলিট এবার সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট সেবার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেসিসের নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাততে শিল্পে পরিণত করার জন্য কথা বলে আসছেন। সে জন্য এই খাতের উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন এবং কর অবকাশ অব্যাহত রাখা সবচেয়ে জরুরি মনে করেন তিনি। তথ্য প্রযুক্তি খাতে যে কর অবকাশ চলছে, তা এই বছরই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই খাতের একজন নেতা হিসেবে এলিট দাবি করছেন, এই অবকাশ দীর্ঘায়িত করা হোক।
এলিট বলেন, ‘কর অবকাশ তুলে দেওয়াটা খুব আত্মঘাতি একটা ব্যাপার হতে পারে। এই খাত থেকে করের এই ছাড় উঠে গেলে, যে বিপুল সম্ভাবনা আছে, তা আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে না। আমরা যে স্বল্পমূল্যে সফটওয়ার ও বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি পণ্য বিশ্ব বাজারে দেওয়ার আশা করছি, তার মূলে কিন্তু আছে করের রেয়াত। এই ছাড়টা না থাকলে বিশ্ব বাজারে আমরা টিকতে পারবো না এবং এই খাতে বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদেরও টেনে আনতে পারবো না। ২০৪১ সালে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হতে চাই। আমি মনে করি, সে জন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে গেলে ২০৪১ না হোক, অন্তত ২০৩১ সাল অবধি কর অব্যাহতি দিতে হবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নতি করার জন্য আরেকটি বড় প্রয়োজন তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিয়ে কাজ করা। সে জন্য তিনি নীতিনির্ধারকদের কাছে আহবান জানিয়েছেন, এই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ তহবিল করার জন্য। এলিট আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কিছু খাতে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ঋণের তহবিল করেছে। আমরা আশা করতে পারি, এই তথ্য প্রযুক্তি খাতের জন্যও তেমন একটা তহবিল করা হবে। হোক সেটা একশ’ কোটি টাকার। তারপরও সেই তহবিল থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বড় একটা সমর্থন দিতে পারবে আইসিসি উদ্যোক্তাদের। সে জন্য ব্যাংকগুলোকে বলেই দিতে হবে যে, ক্রেডিট রেটিং দেখে জামানত ছাড়াই যেন তারা এই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেন। কারণ, এদের বেশিরভাগেরই দেখানোর মত জামানত থাকে না। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে এদেরকে যেন এক অংকের সুদের ঋণ দেওয়া হয়।’
এলিট নিজেই তার প্রতিষ্ঠান থেকে এই ব্যাপারটিতে ভূমিকা রাখতে চান। এরই মধ্যে দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করার পথে আছে নগদ। এলিট বলছেন, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পারবে এই তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে সিঙ্গেল ডিজিট মুনাফায় ঋণ দিতে, ‘নীতিগত কারণেই ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় হবে খুব নগণ্য। ফলে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের পক্ষে এক অংকের সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংক তার গ্রাহকদের আর্থিক ফুট প্রিন্ট দেখে কর্মতৎপরতা করবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সহায়তায় ক্রেডিট রেটিং তৈরি করে তারা ঋণ দেবে। ফলে জামানতের প্রয়োজন হবে না।’
এলিট আরও বলেন, ‘আমি আসলে এই ভাবনাগুলো হতেই বেসিস নেতৃত্বে আসতে চাই। আমি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির ক্ষুদ্রও মাঝারি উদ্যোক্তারের ব্যবসা উন্নয়নে মূলধন বা ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিটা সহজ করতে চাই। এই চাওয়াগুলো বাস্তবায়িত হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেরই বিশাল উপকার হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।’