১০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯২০ সালের শেষের দিকে তৈরি হয়েছিল প্রথম টেলিভিশন। তবে তা ছিল কেবল পরীক্ষামূলক স্তরে, ঘরে ঘরে সাদা-কালো টিভি আসতে আসতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পার হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে এতদিন পর্যন্ত টেলিভিশনে শুধুমাত্র দর্শন ও শ্রবণ – এই দুই ইন্দ্রিয় উপভোগ করা যেত।
তবে এই দু’টি ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে মানুষের আরেকটি ইন্দ্রিয়কেও এবার স্পর্শ করতে চলেছে টিভি। সম্প্রতি এমনই একটি টিভি আবিষ্কার করেছে জাপান। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জাপানের একজন অধ্যাপক এমন এক প্রোটোটাইপ টেলিভিশন বানিয়েছেন, যা মানুষের স্বাদ ইন্দ্রিয়কেও তৃপ্ত করবে। অর্থাৎ চেলিভিশনের পর্দায় কোনো খাবারের ছবি দেখালে, দর্শকরা সেই টিভির পর্দা জিহ্বা দিয়ে চেটে ওই খাবারের স্বাদ পেতে সক্ষম হবেন। এই টেলিভিশন মানুষের টিভি দেখার অভিজ্ঞতা আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, বিস্ময়কর এই টেলিভিশনটি তৈরি করেছেন জাপানের মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোমি মিয়াশিতা। তিনি তার নতুন আবিষ্কৃত এই টিভির নাম দিয়েছেন ‘টেস্ট দ্য টিভি’ বা সংক্ষেপে ‘টিটিটিভি’।
প্রশ্ন উঠতে পারে টেলিভিশন দেখলেই তো আর টিভি পর্দায় প্রদর্শিত খাবারটি মুখে চলে আসবে না। তবে এর স্বাদ কিভাবে আস্বাদন করতে পারবেন পর্দার সামনে থাকা দর্শকরা?
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, টিটিটিভি ডিভাইসটিতে ১০টি স্বাদের ক্যানিস্টারের একটি ক্যারোসেল ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যারোসেল থেকে বিভিন্ন কম্বিনেশনে ওই ১০টি স্বাদ স্প্রে করে কোনো নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ তৈরি হয়। সেই স্বাদের নমুনা একটি ফ্ল্যাট টিভি স্ক্রিনের ওপর হাইজেনিক ফিল্মে রোল করা হয়। ফলে দর্শকরা টিভি স্ক্রিন চাটলেই ওই খাবারের স্বাদ পাবেন।
অধ্যাপক হোমি মিয়াশিতা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে যখন মানুষ শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন, সেই সময়ে এই ধরনের প্রযুক্তি মানুষের সংযোগ ও যোগাযোগের উপায়কে উন্নত করতে পারে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, যন্ত্রটি তৈরির ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য ছিল ঘরে বসেও যেন মানুষ বিশ্বের অন্য প্রান্তের কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন, সেটা সম্ভব করা। আর এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষার্থীর একটি দল।
রয়টার্স বলছে, মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দলটি মূলত স্বাদ-সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরি নিয়ে গবেষণা করেন। যেমন তারা এমন একটি কাঁটাচামচ তৈরি করেছেন, যেটি যে কোনো খাবারের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওই দলটিকে নিয়ে এই প্রোটোটাইপ টিটিটিভি তৈরি করেছেন অধ্যাপক মিয়াশিতা। এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে প্রায় ১ লাখ জাপানি ইয়েন (৮৭৫ মার্কিন ডলার) খরচ হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭৫ হাজার টাকা।
মিয়াশিতা বলেছেন, দূর থেকে খাবারের স্বাদ নেওয়া ছাড়াও যারা রান্নার কোর্স করেন, তারা দূর থেকেই এই টিভির মাধ্যমে শিক্ষা নিতে পারবেন। এছাড়া টেস্টিং গেম এবং কুইজ প্রতিযোগিতার মতো অনুষ্ঠানে এই টিভিগুলো বেশ কার্যকর হবে।