ফেসবুক ‘ভেরিফায়েড’ করতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এ ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড (যাচাইকৃত) করতে হলে সাধারণত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আবেদন করতে হয়। যাচাই–বাছাই শেষে নামের পাশে নীল টিকচিহ্ন দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আর এ ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কিছুটা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। তাঁরা নিজেরা সরাসরি আবেদন না করতে চাইলে সরকারিভাবেও আবেদন করে সহজে অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড বা নীল টিকচিহ্ন পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সহায়তা করে থাকে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে সংসদ সদস্যদের ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড করতে সহায়তার কথা জানান।
দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেক (ভুয়া) ফেসবুক আইডি খুলে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। ইউটিউব চ্যানেল খুলে মানুষের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব বন্ধে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কী তা জানতে চান।
এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, ‘আপনারা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েডের (যাচাইকৃত) জন্য পাঠালে আমরা ভেরিফাই (যাচাই) করে দেব। ফলে ফেক আইডি দিয়ে আপনার নামে কেউ অপপ্রচার করতে পারবে না।’
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, তারা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড করার জন্য আবেদন করতে পারে এবং সে অনুযায়ী ভেরিফায়েড হয়ে থাকে। তবে এটা শুধু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংসদ সদস্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির উদ্যোগে তাঁদের অ্যাকাউন্টগুলো ভেরিফায়েড করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিটিআরসির সচিব মো. নুরুল হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আবেদন করলে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড করার ব্যবস্থা করা হয়। এটা বিনা মূল্যেই করা হয়ে থাকে।
মেটা প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড করার নিয়ম
মেটা বলছে, দুইভাবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করা হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে, ভেরিফায়েড ব্যাজ। অর্থাৎ আবেদনকারী যেসব তথ্য দেন, সেগুলো এবং তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা ফেসবুক পেজে যেসব কর্মকাণ্ড করা হয়ে থাকে, সেগুলো যাচাই–বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরেকটি হচ্ছে, মেটা ভেরিফায়েড। এটা টাকা দিয়ে মাসিক সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে ভেরিফায়েড। এতে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা–সংক্রান্ত নানা সেবা, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এ ভেরিফিকেশন শুধু ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে হয়, কোনো পেজের জন্য নয়।
দুই পদ্ধতির যেভাবে ভেরিফায়েড হোক না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্টের পাশে ব্লু টিক (নীল চিহ্ন) থাকে।
ভেরিফায়েড ব্যাজ পেতে অ্যাকাউন্টধারীকে অবশ্যই মেটার শর্ত ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস মেনে চলতে হবে। এতে অবশ্যই মেটার নীতি অনুযায়ী প্রোফাইল, কভার ফটো ও নাম থাকতে হবে। অ্যাকাউন্ট অবশ্যই প্রকৃত ব্যবহারকারীর হতে হবে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। একটি সঠিক বায়ো (পরিচিতি) এবং অন্তত একটি পোস্ট থাকতে হবে। অ্যাকাউন্টটি সুপরিচিত, অনেক বেশি অনুসন্ধান করা ব্যক্তি, ব্র্যান্ড বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশনের আবেদনের জন্য পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সরকারি কোনো পরিচয়পত্র দিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে একটি ফোন নম্বর বা পরিষেবা বিলের অনুলিপি, নিবন্ধন নম্বর বা করের কাগজ, প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের অনুলিপি লাগবে।
আবেদনের সঙ্গে এসব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যদি আবেদন বাতিল করে, তাহলে ৩০ দিন পর আবার আবেদন করা যাবে। এভাবে অ্যাকাউন্ট/পেজ ভেরিফায়েড করতে কোনো টাকা লাগে না।
অন্যদিকে মেটা ভেরিফায়েড সেবা শুধু কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য। এর জন্যও সরকারি পরিচয়পত্র লাগবে। পাশাপাশি ভেরিফায়েড হওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা লাগবে, যার মাপকাঠি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের জন্য আলাদা।