ফাইভজি নেটওয়ার্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু এ দুই খাতের বিকাশে বড় বাধা সাইবার আক্রমণ। তাই এ দুই খাতের উন্নয়ন ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রযুক্তি বিশারদরা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ফাইভজি নেটওয়ার্কের বিকাশে দ্রুত কাজ করছে এশিয়ার দেশ ভারত। ভোক্তা পর্যায়ের পাশাপাশি এন্টারপ্রাইজ বা ব্যবসা খাতে ডিজিটাল রূপান্তর জড়িত। কিন্তু এ অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার হামলার প্রবণতাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বা দেশ হিসেবে ৮০তম অবস্থানে রয়েছে ভারত। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার হামলার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারত। গত বছর দেশটি থেকে ৫৩ লাখ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ও তথ্য ফাঁস হয়েছে, যেখানে পুরো বিশ্বে ২৯ কোটি ৯৮ লাখ অ্যাকাউন্টে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ সম্প্রতি সাইবার-অপরাধ ও আর্থিক জালিয়াতিতে বিদ্যমান সম্পদ বা উপাদানের অপব্যবহার রোধে ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স প্লাটফর্ম (ডিআইপি) চালু করেছে। মূলত স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন যোগাযোগের অভিযোগ জানাতে সঞ্চার সাথী পোর্টালে চাকসু সুবিধাও চালু করা হয়েছে।
ভোক্তাদের সক্রিয়ভাবে সন্দেহভাজন জালিয়াতির বিষয়ে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে সতর্ক করার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল জালিয়াতি প্রতিরোধের মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে আরো দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সাইবার আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত ২৮ হাজার ২০০-এর বেশি মোবাইল বন্ধ করার জন্য টেলিকম নেটওয়ার্ক পরিষেবা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব ডিভাইসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০ লাখের বেশি মোবাইল নাম্বার পুনরায় যাচাই করার কথাও বলা হয়েছে।
গত বছর ভারতের সাইবার নিরাপত্তা বাজার ৬৬০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ গ্রাহক পর্যায়ে সতর্কতার অভাব ও স্প্যামারদের উন্নত প্রযুক্তির কারণে সাইবার হামলা সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এসব ঘটনার কারণে দেশটিতে পেশাদার সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু লোকস্বল্পতার কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা খাতে মোট কর্মসংস্থানের ৬ শতাংশই ভারতের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় লোকবল স্বল্পতার পার্থক্য ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা খাতে দক্ষ লোকবলের অভাবের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
বিষেশজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন শিল্প খাতে ফাইভজি ও এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতের সময় নেটওয়ার্ক সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার হামলার ঝুঁকি তৈরি হবে। তবে এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, নেটওয়ার্ক বিভাজন, হুমকি প্রতিরোধমূলক বুদ্ধিমত্তা ও নিরাপত্তা পরীক্ষার মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে হামলার ঝুঁকি কমানো যাবে বলেও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।