এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্যামসাং ও অ্যাপলের হাতেই স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এ দুই কোম্পানির বাজার হিস্যাও ২০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন বাজারজাতের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে স্যামসাং। গত ১০ বছরে কোম্পানিটি ৩০০ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে, যা অ্যাপলের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এ দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের মধ্যে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে সুস্থ বাজার প্রতিযোগিতা চলে আসছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। প্রযুক্তিবিশারদদের মতে, কোম্পানি দুটি নিজেদের জায়গা থেকে প্রচারণা চালিয়ে গেছে এবং এটি স্মার্টফোনের বাজারের জন্য ইতিবাচক।
প্রতিযোগিতায় আসার পর শুরুর বছরগুলোয় স্যামসাং বারবার শীর্ষে উঠে আসত এবং অ্যাপল পুনরায় জায়গা দখলে নিত। তবে গত ১০ বছরে দুটি কোম্পানির স্মার্টফোন বিক্রির তথ্য বড় ধরনের পার্থক্যের বিষয়টি তুলে ধরে। আইডিসির সাম্প্রতিক তথ্যের বরাতে অল্টইনডেক্স জানায়, ২০১৪-২৪ সাল পর্যন্ত স্যামসাং ৩০০ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে, যা একই সময়ে অ্যাপলের বিক্রি করা ডিভাইসের তুলনায় ৭০ কোটি ইউনিট বেশি। ২০১৪-২২ সালের মধ্যে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন বিক্রি তুলনামূলকভাবে কমেছে। তবে অ্যাপলের তুলনায় এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি।
এন্ট্রি লেভেল বা সাশ্রয়ীমূল্য থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে স্যামসাং কীভাবে সফলতার ধারা অব্যাহত রেখেছে, তা অনুমেয়। এদিক থেকে কোম্পানির গ্যালাক্সি সিরিজের ডিভাইসগুলো ধারাবাহিকভাবে সফলতা ধরে রেখেছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১ কোটি ৩৫ লাখ ইউনিট এস টোয়েন্টি ফোর বিক্রি হয়েছে, বছরওয়ারি হিসেবে যা আগের ভার্সনের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
২০১৪ সালের কোম্পানির বার্ষিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ২৩ লাখ ইউনিট। ২০২২ সালে তা ২৫ কোটি ৮০ লাখে নেমে আসে। কিন্তু তার পরও কোম্পানিটি বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নির্ধারিত সময়ের আগে এস টোয়েন্টি ফোরসহ গ্যালাক্সি এ সিরিজের ডিভাইস বাজারজাতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে স্যামসাং।
বাজার হিস্যার দিক থেকে স্যামসাংয়ের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে অ্যাপল। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আইফোন বিক্রি ২০ শতাংশ বেড়ে ২৩ কোটি ১০ লাখ ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এরপর টানা চার বছর কোম্পানির বিক্রি নিম্নমুখী ছিল। ২০১৯ সালে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি ১৯ কোটি ইউনিটে নেমে আসে। এর পরের বছর থেকে আইফোন বিক্রি অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয় এবং ২০২২ সালে ২২ শতাংশ বেড়ে ২৩ কোটি ১৮ লাখ আইফোন ইউনিট বিক্রির রেকর্ড গড়ে কোম্পানিটি।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে স্যামসাংয়ের বাজার হিস্যা ৩১ দশমিক ৭ থেকে ১০ শতাংশ কমে ২০ দশমিক ৮-এ নেমে এসেছে। চীনের শাওমি, ভিভো ও অপোসহ অন্যান্য কোম্পানির উত্থানের কারণে স্যামসাং বাজার হারিয়েছে। চীনা কোম্পানির মধ্যে শাওমির বাজার হিস্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির বাজার হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৪-এর প্রথম প্রান্তিকে তা ১৪ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।