আপনি জানলে অবাক হবেন মাত্র ১ মিনিটেই চার্জ হবে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ। এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এজন্য সুপারক্যাপাসিটরের ডিজাইন করেছেন। চার্জিংয়ের নকশাই পাল্টে দেবে এই সুপারক্যাপাসিটর। যার সাহায্যে মাত্র এক মিনিটে চার্জ হবে ফোন ও ল্যাপটপ। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে প্রথাগত চার্জিংয়ে ছক থেকে বেরিয়ে নতুন প্রযুক্তির আঙিনায় প্রবেশ করতে চলেছে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের দুনিয়া।
এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে সুপারক্যাপাসিটর। এটি একটি হাই এনার্জি স্টোরেজ ডিভাইস। মাত্র এক মিনিটে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ এবং ১০ মিনিটে গোটা ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ করতে পারবে। নতুন প্রযুক্তি সুপারক্যাপাসিটর নিয়ে আশাবাদী গবেষকরা।
পৃথিবীতে যখনই কোনও নতুন প্রযুক্তি আসে তখন তা নিয়ে প্রচুর উৎসাহ-উন্মাদনা দেখা যায়। কিন্তু, তা দীর্য সময়ের জন্য কতটা টেকসই তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে পরবর্তী প্রজন্মের চার্জিং টেক সুপারক্যাপাসিটর নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোল্যান্ড ও ব্রিটেনের গবেষকরা। তাদের দাবি, এটির কার্যক্ষমতা বর্তমান চার্জিং প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি।
শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে এমন ডিভাইস নিয়ে গবেষণা বাড়ছে। সেগুলোকে কীভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে রাতদিন অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ঠিক সেরকমই একটি বস্তু সুপারক্যাপাসিটর। এই ডিভাইস প্রচুর পরিমাণে শক্তি ধারণ করতে পারে। আর সেই শক্তি দ্রুত গতিতে ছাড়তেও পারে। ফলস্বরূপ, মাত্র ১ মিনিটে ফুল চার্জ হবে ফোন ও ল্যাপটপ এবং ১০ মিনিটে গোটা ইলেকট্রিক গাড়ি।
প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জার্নালে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। উক্ত জার্নাল অনুসারে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে আয়ন নামক ছোট্ট চার্জযুক্ত কণা একটি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে জটিল চার্জিং নেটওয়ার্ক পরিচালিত করে। আর এগুলো সুপারক্যাপাসিটর বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে।
সুপারক্যাপাসিটরকে উন্নত করার লক্ষ্যে বর্তমানে কর্মরত কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অঙ্কুর গুপ্তা। চার্জিং প্রযুক্তিকে আরও নিখুঁত বানানোর কাজে তিনিও রাতদিন এক করে চলেছেন। এই কর্মযজ্ঞে ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি তিনি।
কী এই সুপারক্যাপাসিটর?
অঙ্কুর গুপ্তা এবং তার দল গবেষণায় জানিয়েছেন, সুপারক্যাপাসিটর হল শক্তি সঞ্চয়কারী ডিভাইস যা ছিদ্রগুলোতে আয়ন তৈরি করে। এগুলো দ্রুত চার্জ করতে পারে এবং ব্যাটারির চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটির গতি এবং কার্যক্ষমতা সবই লুকিয়ে আয়নের গতিপ্রকৃতির মধ্যে। এই সুপারক্যাপাসিটর বানানোর জন্য প্রয়োজন ইলেক্ট্রোলাইট ট্রান্সপোর্ট। বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য তিনি বিখ্যাত পদার্থবিদ গুস্তাভ কিরচফের লেখা মৌলিক বিদ্যুৎ আইন ব্যবহার করেছেন।
তিনি জানান, বেশি কিছু ইলেকট্রিক বাসে সুপারক্যাপাসিটর ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে। যেহেতু সেগুলো ঘন ঘন দাঁড়ায়, তাই প্রতিটি স্টেশনে অল্প সময়ের জন্য চার্জ করে এবং পরবর্তী স্টপেজের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে।
অল্প বিস্তর ব্যবহার ছাড়া, সুপারক্যাপাসিটরের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়বস্তু সবটাই খাতা কলমে। এখনও বড় কোনও পরীক্ষা করা হয়নি। যদিও সুপারক্যাপাসিটর নিয়ে ভীষণভাবে আশাবাদী বিশ্বের তাবড় পদার্থবিজ্ঞানীরা। এটি সফল হলে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন সাফল্য আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই।