প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত সিলিকন ভ্যালি। তবে নতুন গবেষণা বলছে, উদীয়মান উদ্যোক্তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি একই ধাঁচের পণ্য বিকাশের প্রবণতা তৈরি করতে পারে অঞ্চলটি।
‘ইউনিভার্সিটি অফ স্টার্টলিং’ ও ‘জর্জ-অগাস্ট-ইউনিভার্সিটি গটিংজেন’-এর এ গবেষণায় উঠে এসেছে, কোটি ডলারের বিভিন্ন চুক্তি ও স্টার্ট-আপ ‘স্বর্গরাজ্যের’ গল্পের পেছনে সিলিকন ভ্যালির ‘অসম’ বিনিয়োগের দৃশ্যপটটি আসলে অনেক উদীয়মান ব্যবসার জন্য বড় এক বাধা।
তবে গবেষকদের পরামর্শ বলছে, অন্যান্য দেশের এখনও সিলিকন ভ্যালির বিচক্ষণ উদ্যোক্তাভিত্তিক ইকোসিস্টেম থেকে শেখার সুযোগ রয়েছে, যেখান থেকে অ্যাপল ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টের জন্ম হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্টার্ট-আপ বাছাই করার ক্ষেত্রেও সাবধানী হওয়া যাবে এতে করে।
এদিকে, প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন কোম্পানিতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করার প্রবণতা সিলিকন ভ্যালিতে অস্বাভাবিক কিছু না হলেও গবেষণার ফলাফল বলছে, এর বিনিময়ে বড় মাশুল গুনতে হয় কোম্পানিগুলোকে।
যেসব কোম্পানি সিলিকন ভ্যালিতে অফিস খোলে, তারা এরইমধ্যে সফল বা তাদের কাছে অনেক অর্থ ও সম্পদ রয়েছে, যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাই দূরে সরে গেছে বলে দাবি করেছেন এ গবেষণাটির গবেষক ড. মিশেলা রুস্কোভা ও ড. ক্যাথারিনা শেইজেন। এমন প্রবণতা অঞ্চলটিকে ‘উদ্যোক্তাদের জন্য একটি শাঁখের করাত’ করে তুলেছে বলে যুক্তি তাদের।
এ গবেষণাটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির ৬৩ জন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, নিজেদের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গ্রাহক আকৃষ্ট করার আগ পর্যন্ত সাধারণত নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে থাকেন সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তারা।
এদিকে, বার্লিনের উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেমের চিত্র একেবারে ভিন্ন, যা সিলিকন ভ্যালির মতোই একটি স্টার্টআপ হাব। এ দিকটায় কেবল একটি শক্তিশালী দল লাগে, যাদের কাছে বিনিয়োগযোগ্য আইডিয়া আছে। তবে, এখানে বিনিয়োগ কার্যক্রম ও স্টার্টআপ কোম্পানির সংখ্যা সিলিকন ভ্যালির তুলনায় অনেক কম।
গবেষকদের যুক্তি, কোনো কোম্পানির ব্যবসা প্রাথমিকভাবে সাফল্য দেখানোর পর বিনিয়োগ করার মানে, এতে ব্যর্থতার ঝুঁকি কম হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনাও বেশি।
এর আরেকটি মানে দাঁড়ায়, নিজস্ব কোম্পানি তৈরি বা এর জন্য বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আগে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার নিয়ে আরও সৃজনশীল হতে হবে স্টার্টআপগুলোকে।
“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সিলিকন ভ্যালি আসলে ‘স্টার্টআপ জগতের অলিম্পিক গেইমস’ হিসেবে ভূমিকা রাখে। এটি এমন এক জায়গা, যেখানে যোগ্যতমকে পুরস্কৃত করা হয়। আর এটি সেইসব উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও চেঞ্জ মেকারদের জায়গা, যারা এরইমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ স্টার্লিং ম্যানেজমেন্ট স্কুল’-এর শিল্পোদ্যোগ বিভাগের প্রভাষক ও এ গবেষণার সহ-লেখক ড. রুস্কোভা।
“যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় সমকক্ষদের বিপরীতে, সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের উচিৎ, বিনিয়োগকারীদের কাছে যাওয়ার আগেই নিজস্ব পণ্যের বড় চাহিদা সৃষ্টি করা। প্রাথমিকভাবে কোনো পণ্য তৈরি ও তা বিক্রি শুরুর ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাকে নিজের গাঁটের পয়সাই খরচ করতে হয়। এ অসম খেলার মাঠ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি শাঁখের করাত।”
“পাশাপাশি এর ফলে বৈষম্যও বেড়ে যায়। বিশেষ করে, অনুন্নত আর্থ-সামাজিক পটভূমি থেকে আসা উদ্যোক্তা ও স্টার্ট-আপগুলোর মধ্যে একই ধাঁচের পণ্য তৈরির প্রবণতা তৈরি হতে পারে।”