জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোরকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রায় ৯৬ মিনিটের অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘খোকা’ প্রিমিয়ার শো বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের “মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন” প্রকল্পের উদ্যোগে ১১ পর্বের এই অ্যানিমেশন সিরিজ নির্মাণ করা হয়। ১১ পর্বের সিরিজটিকে একসাথে করে অ্যানিমেশন ফিল্ম হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘খোকা’ প্রিমিয়ার শো পথ শিশু এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে উপভোগ এবং পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সারাদিন ব্যাপী সিরিজটি মোট ৫টি প্রদর্শনী আয়োজিত হচ্ছে। প্রদর্শনীগুলো যথাক্রমে সকাল ১০:৪৫, দুপুর ১:৩০, বিকাল ৩:৪৫, বিকাল ৫:৪০ এবং সন্ধ্যা ৭:৪০। দুপুর ১:৩০ এর প্রদর্শনীতে সংসদ সদস্যগণ এবং বিকাল ৩:৪৫ এর প্রদর্শনীতে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে সিরিজটি উপভোগ করেন।
অ্যানিমেশন সিরিজটি উপভোগ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রতিমন্ত্রী পলক তাঁর প্রতিক্রিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন এবং উন্নত আধুনিক সোনার বাংলা গড়ার ভিত্তি রচনা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর দুরন্ত কৈশোর, সংগ্রামী ছাত্রজীবনকে আমরা শিশু-কিশোরদের প্রিয় মাধ্যম অ্যানিমেশনে তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, শৈশবে বঙ্গবন্ধু যেমন একজন মানবিক শিশু ছিলেন, কৈশোরে তেমনই দুরন্ত-প্রতিবাদী ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী প্রত্যন্ত অঞ্চল টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে কীভাবে বড় হয়ে আস্তে আস্তে খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে মুজিব ভাই, মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতায় পরিণত হলেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম, ত্যাগ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক নেতৃত্বকে এই অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সহজ-সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্পের সমন্বয়ে সৃজনশীল তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কাজ করছে। মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৮ হাজার মোবাইল অ্যাপ এবং গেইম ডেভেলপার তৈরি করেছি। এছাড়া দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে মোবাইল অ্যাপস এবং গেমিং ল্যাব, ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ-গেইম টেস্টিং সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অত্যাধুনিক শেখ রাসেল অ্যানিমেশন স্টুডিও স্থাপন করা হয়েছে।
পলক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সারাবিশ্বে অ্যানিমেশন শিল্পের বাজার দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে দেশের মেধাবী তরুণরা যাতে অবদান রাখতে পারে তার জন্য আমরা ফিউচার অ্যানিমেটর্স অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ইকোনমি (ফেস অব স্মার্ট বাংলাদেশ) প্রকল্প গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ সহায়তায় পরিবেশ এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরির জন্য ‘সং অফ ঝিনুক’ এবং বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনকে তুলে ধরার জন্য ‘দি স্ট্রাগল’ নামে অ্যানিমেশন মুভি তৈরি করা হবে।
সারা বিশ্বের প্রত্যেকটা সেক্টরকে ডিজার্ভ করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এআই এক্সপার্ট এবং টুল ব্যবহার করে ভবিষ্যতে অ্যানিমেশন শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য একটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের তরুণ-তরুণীদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ফিউচার ক্রিয়েটিভ ইকোনোমি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে আরও ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক অ্যানিমেশন ল্যাব স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, দেশের জনসাধারন ও নতুন প্রজন্মকে মানবিক হতে ও দেশপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে অ্যানিমেটেড সিরিজটি বিশেষ অবদান রাখবে। দেশীয় অ্যানিমেটর দ্বারা উন্নয়নকৃত অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়ায় সব বয়সী দর্শকেরা সহজেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশরের জীবনী সম্পর্কে সহজে জানতে পারবেন।
মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন”প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই সিরিজটির পরিচালনায় ছিলেন প্রোল্যান্সার স্টুডিও এর সোহেল মোহাম্মদ রানা। প্রযোজকের দায়িত্বে ছিলেন ছিলেন শেখ অলিদুর রহমান হীরা এবং সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন মার্স সলিউশনের কর্ণধার আইসিটি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, সংস্কৃতি ও সমাজকর্মী এম ই চৌধুরী শামীম ও দিলারা আফরোজ খান রুপা (এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী এবং লেখক)।
এই সিরিজে স্ক্রিপ্ট এর দায়িত্বে ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় নাট্য রচয়িতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব মাসুম রেজা সহ পুলক রাহা, রতন সিদ্দিকি, শেখ সাদি, মিথুন হাসান সহ প্রমুখ। রিসার্চের দায়িত্বে ছিলেন সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত। ভয়েস ডিরেকশনের দায়িত্বে ছিলেন রফিকুল সেলিম। লিড ক্যারেক্টার ডিজাইনার ছিলেন যাওয়াদ মাহমুদ।