বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান কোনটি- এ নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। কখনও অ্যাপল, কখনও মাইক্রোসফট, আবার কখনও এনভিডিয়া- ঘুরে ফিরে এদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ শীর্ষে অবস্থান করছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু এশিয়ার সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান কোনটি- এই নিয়ে আলোচনা সেভাবে শোনা যায় না। অথচ প্রযুক্তি বিশ্বে হার্ডওয়্যার ও সফট্ওয়্যার তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান এশিয়ার। তাহলে এশিয়ার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কেন থাকবে পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে। তাই চলুন আজ জেনে নেয়া যাক এশিয়ার সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান- তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)- সম্পর্কে।
তাইওয়ান-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি বিশ্বের সর্ববৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ তারা তৈরি করে দেয়। টিএসএমসি-এর গ্রাহক তালিকায় আছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকর্পোরেশন, আছে এআই চিপ তৈরিতে আধিপত্য বিস্তার করা এনভিদিয়াও।
গত সোমবার শেয়ার বাজারে টিএসএমসি-এর বাজার মূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ১১৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
এখন আপনি বলতেই পারেন অ্যাপল, এনভিডিয়া যাদের গ্রাহক, শেয়ার বাজারে তাদের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিকের মধ্যেও অস্বাভাবিক হচ্ছে চলতি বছর এখন পর্যন্ত তাদের শেয়ারের মূল্য ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে- যার মূল কারন হচ্ছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
এইআই প্রযুক্তির উন্নয়নে গুগল, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া ইতোমধ্যেই বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। সামনের দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে, এমন আভাসও তারা দিয়ে রেখেছে। আর এআই নিয়ে চলমান এই আলোড়নই টিএসএমসি-এর উত্থানকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ তৈরিতে তাইওয়ানের সুনাম পৃথিবীব্যাপী। তাই টেক জায়ান্টদের মাঝে এআই নিয়ে উন্মাদনার বর্তমান প্রেক্ষাপটে শুধু চলতি বছরেই তাইওয়ানের শেয়ার বাজারে (টিডব্লিউএসই) বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। তবে এর মধ্যে এশীয়দের বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তাইওয়ানের প্রযুক্তি বাজারে বিনিয়োগের আরও সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।
সর্বোপরি, এআই চিপ তৈরিতে এনভিডিয়ার মতো টেক জায়ান্টরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তাতে করে সামনের দিনগুলোতে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের শেয়ার দর যে আরও বৃদ্ধি পাবে সেটা অনুমান করাই যায়। অ্যাপলের বাজার মূল্য সম্প্রতি সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, মাইক্রোসফট ও এনভিডিয়াও সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের দোরগোড়ায়। এআই চিপ তৈরির আকাশছোঁয়া চাহিদায় টিএসএমসি’ও কি তাহলে সেদিকেই হাঁটছে? উত্তরটা আপাতত সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া যাক।