পরীক্ষামূলকভাবে ফায়ারওয়াল ব্যবহারের মাধ্যমে পাকিস্তানে ইন্টারনেটের গতি কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এতে শত-কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে মোবাইল ডেটানির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বিপাকে পড়েছেন পাঁচ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার। যদিও শাহবাজ শরীফের সরকার বলছে, রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রম ঠেকাতে সাহায্য করবে এই ফায়ারওয়াল। খবর এখন।
রেস্তোরাঁর বাইরে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ার অপেক্ষায় ফুড ডেলিভারিম্যানরা। দুর্বল গতির কারণে আয় নিয়ে শঙ্কার ছাপ তাদের চোখেমুখে।
এক ডেলিভারিম্যান বলেন, ‘ইন্টারনেটে সমস্যার কারণে তিনটা অর্ডার হাতছাড়া হলেই আধা ঘণ্টার জন্য আমাদের নতুন অর্ডার নিতে দেয় না কোম্পানি। অনেকদিন ধরেই আয়ের ৭০ শতাংশই গায়েব। আগের তুলনায় মাত্র ৩০ শতাংশ আয় করতে পারছি।’
বিনামূল্যে প্রযুক্তি দক্ষতা তৈরির বিজ্ঞাপনে লাইক ছিল কয়েক হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারীর। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে নিবন্ধন করেন দেড় হাজার মানুষ। কিন্তু গেলো সপ্তাহে যেদিন প্রথম ক্লাস, লাইভ সেশনে যোগ দেন মাত্র কয়েকজন। কারণ ইন্টারনেট চলছে শামুকের গতিতে।
ওয়্যারলেস অ্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের তথ্য বলছে- দেশটিতে গেলো কয়েক সপ্তাহে ইন্টারনেটের গতি কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশজুড়ে সরকার নতুন যে পরীক্ষামূলক ফায়ারওয়াল চালু করেছে, তার জেরেই এমন পরিস্থিতি। ফায়ারওয়ালের কারণে ৩০ কোটি ডলারের ব্যবসা হারানোর শঙ্কা গেলো সপ্তাহে জানায় পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউজেজ অ্যাসোসিয়েশন।
শত-কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। সবচেয়ে ঝুঁকিতে এ খাতে যুক্ত পাঁচ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার, যাদের নির্ভর করতে হয় নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের ওপর।
পাকিস্তান ফ্রিল্যান্সার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী তোফায়েল আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগেরই, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যার কারণ নয়, সমাধান দরকার। শুধু ফ্রিল্যান্সার না, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ইনফ্লুয়েন্সার, ইউটিউবার, ভ্লগার, ব্লগার প্রত্যেকের ইন্টারনেট দরকার, অন্য কিছু না।’
পাকিস্তানের কানেক্ট কমিউনিকেশন্সের পরিচালক আখলাক আহমেদ বলেন, ‘তাদের উচিত বিষয়টি খোলাসা করা। সরকারের কোনো প্রতিনিধি আমাদের সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। আমাদের গ্রাহকরা চিন্তিত। তাদের জন্য আমরা চিন্তিত। একজন ইন্টারনেট চালালে আরেকজন পায় না।’
সংকটের পেছনে দায় প্রত্যাখ্যান করলেও ফায়ারওয়াল সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তান সরকার। ইসলামাবাদের দাবি, সরকারি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা।
প্রকৃতপক্ষে গেলো বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জেরে অস্থিরতা ঠেকাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে পাকিস্তান সরকার।
বোলো ভির ডিজিটাল অধিকার পর্যবেক্ষক ও পরিচালক উসামা খিলজি বলেন, ‘সরকার ও পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের দিক থেকে স্বচ্ছ্বতার ভীষণ অভাব। সরকারের উচিত ইন্টারনেটের গতি কমানোর এই নতুন পদক্ষেপগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা। কারণ এসব পদক্ষেপ অকার্যকর, সাংঘর্ষিক। এতে নজরদারি ও তথ্যে বাধা বাকস্বাধীনতা আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন হয় ।’
কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে দূষণ, তথা অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক ট্রাফিক ঠেকানোর মাধ্যমে সাইবার হামলা থেকে রক্ষায় কাজ করে ফায়ারওয়াল হিসেবে পরিচিত বিশেষ এক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এর মাধ্যমে এক নেটওয়ার্ক থেকে ভিন্ন নেটওয়ার্কে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার কথিত রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারবে। আগে থেকেই ফায়ারওয়াল রয়েছে ইরান, চীন, সৌদি আরব, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।