আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রচুর অর্থের খরচে নেওয়া এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং সাধারণ জনগণের কী উপকার হয়েছে, সেগুলোই যাচাই করা হবে এই মূল্যায়নে। প্রকল্প মূল্যায়নে কমিটিও গঠন করেছে আইসিটি বিভাগ। পাশাপাশি আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডে (বিডিসিসিএল) নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে পৃথক একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি প্রকল্পের এমন মূল্যায়নের আদেশ দেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। উপদেষ্টার আদেশে দুটি কমিটি পৃথকভাবে প্রস্তাব করে তার কার্যালয়ে পাঠানোও হয়। ইতোমধ্যে সেই কমিটি উপদেষ্টার অনুমোদনে চূড়ান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন। যদিও কমিটির সদস্যদের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। অবশ্য ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প পর্যালোচনা কমিটিতে সাতজন সদস্য রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিতে বাকি সদস্যরা থাকবেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), আইসিটি অধিদপ্তর, এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, আইসিটি বিভাগ এবং কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটির প্রতিনিধিরা। মূল্যায়নে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে আইসিটি বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং চলমান প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই কমিটি মূলত দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে। এক. যেসব উদ্দেশ্যে এসব প্রকল্প গৃহীত হয়েছে, তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে। দুই. সেগুলো থেকে দেশের সাধারণ জনগণ কীভাবে এবং কতটুকু উপকৃত হয়েছে। এই মূল্যায়নে আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট অংশীদারদেরও মতামত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, বিডিসিসিএলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের অনিয়ম তদন্তে পৃথক আরেকটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটিতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন। সদস্য সচিব হিসেবে কমিটিতে আছেন বিডিসিসিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালিদ ইবনাল আসাদ এবং আহ্বায়ক হিসেবে আছেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইসরাত হোসেন খান।
এ বিষয়ে বিডিসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আতাউর রহমান খান বলেন, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের জন্য গত ২০ আগস্ট আইসিটি বিভাগে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তদন্ত কমিটিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে বিডিসিসিএল। তদন্তের মাধমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
কমিটিগুলো সম্পর্কে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আইসিটি বিভাগে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই এবং সেগুলোতে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধানের জন্যই কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিডিসিসিএলে নিয়োগেও কোনো স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি চাই কমিটিগুলো স্বাধীন এবং প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।