আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ রাসেল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দেশব্যাপী আইটি-ভিত্তিক ডিজিটাল ল্যাব ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পরিকল্পনা ও আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৫৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন করছে; একইসঙ্গে ইঙ্গিত মিলেছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলেও বাদ দেওয়া হতে পারে শেখ রাসেল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই ছিলেন শেখ রাসেল; অন্যদিকে, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের চলমান এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ‘রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার নামে ৪৯১ উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘জয় সেট সেন্টার’ স্থাপনের কথা রয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া ‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি (ইডিসি)’ নামক প্রকল্পটি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হলেও বর্তমানে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই না হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আটকে আছে। ৫৮.৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটিতে চীনের ঋণ ধরা হয়েছে ৩৩.৭৮ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক তানজিনা ইসলাম বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা জানা নেই। এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আবার ডিজিটাল ল্যাব ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম (রাসেল এবং জয়) থাকে কিনা তাও এখনো নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ।”
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য রেহানা পারভীন বলেন, “বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার চলমান ও প্রস্তাবিত সব প্রকল্প নতুন করে পর্যালোচনা করবে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বৈঠকে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কিছু কিছু প্রকল্পের (একনেকে যাবে এমন নতুন এবং সংশোধিত প্রকল্প) বিষয়ে কমিশন পর্যালোচনাও শুরু করেছে। তবে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর বিষয়ে এখনও নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।”
তিনি আরও জানান, “চলতি সপ্তাহে পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের আরও একটি সভা হয়। ওই সভায় উন্নয়ন প্রকল্পে নাম সংশ্লেষণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে, উন্নয়ন প্রকল্প কোনো ব্যক্তির নামে হবে কিনা।”
এদিকে, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত তাদের বিভাগে গৃহীত প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য, কার্যক্রম, কার্যক্রমের বিপরীতে অর্জিত সুনির্দিষ্ট আউটপুট যাচাই করা হবে।
গত জুলাই মাসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন মাঠে, তখনও এ সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে তৎপর ছিলেন সাকেব ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
চলতি বছরের ৭ জুলাই, পরিকল্পনা মন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে পলক বলেছিলেন, ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অনুমোদিত হলেও আজ পর্যন্ত চীন সরকারের এক্সিম ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চীন সরকারের এক্সিম ব্যাংকের সাথে দ্রুত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করা প্রয়োজন।
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এই বিভাগের চলমান বেশিভাগ প্রকল্প শেখ পরিবারের নামে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৯,০০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে। একইভাবে, শেখ কামালের নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।
বর্তমান শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে আইসিটি বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে— দেশব্যাপী শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (২য় পর্যায়) এবং শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি-এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।