নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। না হলে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপনি চিরকাল জেনে এসেছেন ফোন কী ভাবে কিনতে হয়। কিন্তু জানা হয়নি ফোন কীভাবে কিনতে নেই। একটা ফোন কিনতে গেলে আমরা তাড়াহুড়া করি, কখনও ভুল পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। এগুলো হয় কারণ আমরা জানি না কীভাবে সঠিক ফোন বাছতে হয়, বা বলা যেতে পারে কী ভাবে ভুল ফোন কেনার থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়।
১. নতুন ফোন যখন বাজারে আসে সেটি নিয়ে চর্চা বেশি থাকে। যে কোনও সংস্থাই তৈরি করুক না কেন, কম-বেশি একটা উত্তেজনা আমাদের মধ্যে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। এই উত্তেজনার ফলে আমরা ভুল ফোন কিনে ফেলি৷ ফোন আনার আগে নানা ভাবে প্রচার করা হয়। কিন্তু সেই ফঁদে পা দেওয়া চলবে না।
২. নতুন ফোন এলে তার রিভিউ দেখুন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পড়ুন, ইউটিউবে রিভিউ ভিডিও দেখুন। কিন্তু কখনও একটা ব্লগ পড়ে বা একটা ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না। শর্ট ভিডিও বা রিলস দেখলেও হবে না। বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করুন। এর মাধ্যমে আপনার স্পষ্ট ধারণা হবে যে কোন ফোনে কী কী আছে।
৩. নম্বরের খেলায় ফাঁসবেন না। সংস্থা ফোন বিক্রি করার জন্য আমাদের দিকে বড় বড় নম্বর ছুড়ে দেয়। ২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ২৪০ ওয়াটের চার্জার, ২৪ জিবি র্যাম ইত্যাদি। ২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার চেয়েও ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ভালা ছবি দিতে পারে। ৬৭ ওয়াটের চার্জার আমাদের জীবনে যথেষ্ট। ৮ জিবি র্যাম ফোনের প্রায় সব চাহিদা পূরণ করতে পারে৷ তাই নম্বরের খেলায় অংশগ্রহণ করবেন না। এই সব নম্বরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ফোনের অপ্টিমাইজেশন।
৪. কেনার জন্য সঠিক সময় বুঝুন। এসি যেমন শীতকালে সব থেকে বেশি ছাড়ে পাওয়া যায়, তেমনই মোবাইল ফোন কেনারও সঠিক সময় আছে। নজর রাখুন বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে বিশেষত উৎসবের সময়গুলোতে। তখন প্রায় সব সংস্থা বিভিন্ন ছাড় দেয়। আরও মজার বিষয় হল, যে সময় অনলাইন সেল চলে সেই সব সময়ে অফলাইনেও অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হয়। উৎসবের মৌসুমে অনেক নতুন যন্ত্র বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু আপনাদের জন্য বিশেষ পরামর্শ, ফোন কেনার সময় পাঁচ-ছয় মাস আগে বাজারে আসা ফোন কিনুন। এই সব ফোনেই কিন্তু সব থেকে বেশি ছাড় থাকে। আবার ফোনগুলো যেহেতু বেশি দিন আগে বাজারে আসেনি, তাই সদ্য বাজারে আসা ফোনের সঙ্গে এদের গুণগত তফাত তেমন একটা থাকে না।
৫. ফোন কেনার আগে নিজের বাজেট ঠিক করে তবেই দোকানে যান। বুদ্ধি খাটালে বাজেট বাড়াতে হবে না, আগের পয়েন্টটা খেয়াল রাখলে আপনার বাজেটেই আর একটু দামি ফোন পেয়ে যাবেন। তাছাড়া বাজেট আগে থেকে ঠিক করে গেলে দামি ফোন কেনার লোভে ধারে ফোন কেনার জালে ধরা পড়ার আশঙ্কা কম থাকবে।
৬. সাধ্যের বাইরে গিয়ে ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনার ফাঁদে পড়বেন না। এখন ২০-৪০ হাজার টাকার একটা ফোনে প্রায় সব কিছুই খুব ভালোমানের পাওয়া যায়। এই দামে আপনি বেশির ভাগ ফ্ল্যাগশিপ ফিচারও পেয়ে যাবেন। ভালো ব্যাটারি, ভালো ক্যামেরা, অসাধারণ ডিসপ্লের সঙ্গে ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর, আই পি রেটিং, ওয়্যারলেস চার্জিং, সবই এখন মধ্য বাজেটের ফোনে পাওয়া যায়। আপনি দুই বা তিন গুণ দাম দিয়ে ফোন কিনলে তার থেকে দ্বিগুণ বা তিন গুণ ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন এমনটা কিন্তু নয়। ফ্ল্যাগশিপ ফোন অনেকটাই কিন্তু দেখনদারি, কার্যকরী নয়।
৭. ফোন হাতে নিয়ে দেখুন। ছবি বা ভিডিওতে দেখার সঙ্গে ফোন হাতে নিয়ে দেখার আকাশ পাতাল তফাৎ। ফোন কেনার আগে অন্তত এক বার হাতে নিয়ে দেখার চেষ্টা করুন যে সেটা আপনার পছন্দ হচ্ছে কি না। আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে কি না।
৮. ব্র্যান্ডের নামে মুগ্ধ হবেন না। কোনও সংস্থা আপনার স্বার্থ রক্ষার জন্য ফোন তৈরি করে না। তাই কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জন্য পাগল হবেন না। আপনার বাজেটে যে ফোনটা ঠিক মনে হচ্ছে সেটাই নিন।
৯. বছরের পর বছর সফটঅয়্যার আপডেট দেওয়া একটা মোবাইল সংস্থার পক্ষে খরচসাপেক্ষ। তাই তারা এটা এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু সফটওয়্যার আপডেট মোবাইলের নিরাপত্তা, নতুন ফিচার, সফটওয়্যারের সমস্যা দূর করার জন্য জরুরি। তাই দেখে নিন কোন ফোনে নিয়মিত ও দীর্ঘ দিন সফটওয়্যার আপডেট পাবেন। পাশাপাশি ফোনে অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপন বেশি আসছে কি না, অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন আগে থেকেই ইনস্টল করা আছে কিনা জানার জন্য চোখ কান খোলা রাখুন।
১০. ফোন কিনলেই তো হল না। কোনও সমস্যা হলে সারাবেন কোথায়? তাই আগাম জেনে নিন সার্ভিস সেন্টার কাছাকাছি আছে তো! দেখে নিন সংস্থার গ্রাহক পরিষেবা কেমন।