অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অধীনস্থ কোম্পানীগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আইটি উদ্যোক্তা কাউন্সিল ও বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। বিগত সরকারের আমলে সংস্থাটির পদোন্নতিবঞ্চিত সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নেরও দাবি জানিয়েছে তারা। একইসঙ্গে, দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের পাচারকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
(১৮ সেপ্টেম্বর) ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বরাবর এক স্মারকলিপিতে এই দাবি জানানো হয় ।
চিঠিতে বলা হয়েছে বিগত সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদি সরকারের অধীনে সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে সীমাহীন দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয়। এইসব দপ্তরের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড (BDCCL) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ অন্যতম। প্রকল্পগুলোর মধ্য এ টু আই (A2I), বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্প, এজ প্রজেক্ট (EDGE) এবং মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প অন্যতম।
এই প্রকল্পে দুর্নীতির নেতৃত্ব প্রদান করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অত্যন্ত কাছের ও জুনাইদ আহমেদ পলকের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা। এদের মধ্য রণজিৎ কুমার (নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), এ. কে এম. লতিফুল কবির (ব্যবস্থাপক (জেনারেশন সিস্টেম), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড), মোঃ ইরেশ সারোয়ার, (ব্যবস্থাপক (নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড) ড. অশোক কুমার রায় (পরিচালক (বিকেআইআইসিটি), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), ইকরামুল হক (ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড), রনজিত কুমার, ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড) তারিক বারকতুল্লাহ (পরিচালক (বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্প), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল) এবং মোঃ তোফায়েল হোসেন (উপসচিব, চ্যাঞ্জ ম্যানেজম্যান্ট স্পেশালিস্ট (EDGE Project), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল) অন্যতম বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে উল্লিখিত ১৬ জন কর্মকর্তার সকল দুর্নীতির সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সাধারণ তদন্ত প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রীতা কিংবা অন্য কোন দুর্বলতার কারণে চাকুরীতে তাদের পুনরায় ফিরে আসা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার, দেশ ও সংস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ উক্ত ১৬ জনের দুর্নীতির তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ এবং তাদেরকে দেশের আইন মোতাবেক দ্রুততর সময়ে যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার জোরালো দাবী জানাচ্ছি। তৎপ্রেক্ষিতে বর্ণিত ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করা, তদন্তকালীন সময়ে তারা যেন অফিস থেকে কোনোরূপ সুযোগ-সুবিধা (বেতন, ভাতা ইত্যাদি) গ্রহণ করতে না পারে, অফিসের যাবতীয় একসেস (ই-মেইল, নথি, বিভিন্ন গ্রুপ, ক্লাউড, সার্ভার ইত্যাদি) ও ইকুইপমেন্ট/ এসেট (ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল, হার্ড ড্রাইভ ইত্যাদি) ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। পাশাপাশি, অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের স্ত্রীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা এবং সর্বোপরি তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা’র এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নির্দেশনা প্রদান করার জন্য দাবি জানানো হয়।
আরো বলা হয়, বিগত স্বৈরশাসকের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে যে অসম চুক্তিসমূহ সম্পাদন করা হয়েছে, তা সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরীক্ষার ভিত্তিতে বিবেচনা করে সম্পাদিত অসম চুক্তিসমূহ বাতিল করতে হবে। বিশেষত, বিডিসিসিএল এর সাথে মেঘনা ক্লাউড (GENNEXT TECHNOLOGIES LIMITED) নামে একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে। চুক্তির এগ্রিমেন্টে দেখা যায়, সরকার নিজস্ব টাকা খরচ করে সব ধরনের অবকাঠামো তৈরি করে দিবে। কিন্তু রাজস্ব আয়ের ৭৬ শতাংশ GENNEXT TECHNOLOGIES LIMITED পেলেও মাত্র ২৪ শতাংশ পাবে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিডিসিসিএল। একদিকে পরামর্শকদের বাজারদরের চেয়ে বেশি সম্মানী প্রদান; অন্যদিকে তাদের পরামর্শে ও যোগসাজশে লভ্যাংশের অধিক পরিমাণ অর্থ GENNEXT TECHNOLOGIES LIMITED এর মাধ্যমে সরকারী কোম্পানীর কোষাগার থেকে লোপাট হচ্ছে। মেঘনা ক্লাউড চুক্তিসহ সকল অসম চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আইনের আওতায় এনে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনার জোরালো দাবি জানানো হয়।