কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনা থাকলেও উন্নত এই প্রযুক্তির কারণে মানুষের কর্মক্ষেত্র যেন সংকুচিত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার কথা বলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় দেয়া নিজের ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিশ্ব নেতৃত্বকে উদ্দেশ্য করে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির বিশাল সম্ভাবনার কথা গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন। তবে এর পাশাপাশি এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর কথাও তিনি সকলকে মনে করিয়ে দেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগে বাংলাদেশ আগ্রহী উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের তরুণ সমাজ Generative Artificial Intelligence-এর সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। একজন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তাঁরাও চায় নতুন পৃথিবীতে নিয়োজিত হতে, কর্মক্ষম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগজনিত অর্জিত সুফল থেকে পিছিয়ে না পড়ে, বিশ্ব সম্প্রদায়কে তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, নিশ্চিত করতে হবে যেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কর্মক্ষেত্রে মানুষের চাহিদা সংকুচিত না হয়ে যায়।”
জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আগ্রহ ও উচ্ছ্বাসের কথা ব্যক্ত করার পাশাপাশি ড. ইউনূস অটোনোমাস ইন্টেলিজেন্সকে মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ বলে মনে করেন। অটোনোমাস ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির ব্যবহারে বিজ্ঞানীদের সাবধানতা অবলম্বনেরও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, “…আমরা Autonomous Intelligence অর্থাৎ যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেই নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সম্প্রসারিত করতে পারে, মানুষের কোন হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে, তার ব্যাপারে আমরা বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তাঁরা যেন এক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার আগে মানুষের উপর এর প্রভাব সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে অগ্রসর হন। আমাদের ধারণা Autonomous Intelligence মানুষের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।”
বাংলাদেশের জনশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ তরুণ-তরুণীর যুক্ত হচ্ছেন। তরুণ সমাজকে দক্ষতা অর্জন এবং বিভিন্ন কর্মপরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার গুরুত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়েও বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। এছাড়া বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের কথাও তিনি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন। সর্বোপরি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জাতিসংঘকে পাশে থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।