ব্রাজিলে সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছেই না জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এর (পূর্বের ‘টুইটার’)। আগস্টের শেষ দিকে ব্রাজিলের আদালত এক্স-কে দেশটিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এবারে বকেয়া জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে ব্রাজিলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার সুযোগ ছিলো। কিন্তু জানা গেল ভুল ব্যাংকে বকেয়া জরিমানা পরিশোধ করেছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স!
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেক্সান্দ্রে দে মোরেস এক্স-এর আইনজীবীদের জানায় প্রতিষ্ঠানটি জরিমানার বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেছে ঠিকই, কিন্তু ভুল ব্যাংকে। আদালত তাই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশটিতে এক্স-এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকে।
ব্রাজিলের আদালত এ বিষয়ে রায় স্থগিত রাখায় দেশটিতে এক্স তাঁদের কার্যক্রম এখনই শুরু করতে পারছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁদেরকে এখন আদালতের নির্দেশ মেনে সঠিক ব্যাংকে বকেয়া জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। এরপর সার্বিক দিক বিবেচনা করে এক্স-এর আর্জির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।
উল্লেখ্য, এক্স-এর জন্য ২১ কোটি জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মার্কেট। আর শুধু এক্সই নয়, ইলন মাস্কের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকেরও বিশাল ব্যবসায়ীক স্বার্থ রয়েছে দেশটিতে।
স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক স্বল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটিতে। বিশেষ করে অ্যামাজনের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজেই ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ায় দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁদের গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে দেশটির আড়াই লাখেরও বেশি গ্রাহক স্টারলিংক এর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
ব্রাজিলে যে কারণে নিষিদ্ধ হয় এক্স
ব্রাজিলের সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের সাথে বিশেষ করে বিচারক আলেক্সান্দ্রে দে মোরেস এর সাথে অনেক দিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে এক্স-এর। এক্ষেত্রে দেশটির রাজনীতিতে ইলন মাস্কের পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়াকেও কোনো কোনো বিশ্লেষক এক্স-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ব্রাজিলে এক্স নিষিদ্ধব্রাজিলে এক্স নিষিদ্ধ
তবে এক্স-এর সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় আদালতের আদেশ অমান্য করার কারণে। ব্রাজিলের শীর্ষ আদালত ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য ও ভুল তথ্য ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট এক্স থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেয়। বিষয়টিকে ‘সেন্সরশিপ’ উল্লেখ করে ইলন মাস্ক সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ প্রতিপালনে অস্বীকৃতি জানায়।
পরবর্তীতে আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এক্স তাঁদের একজন আইনী প্রতিনিধির নাম জানাতে ব্যর্থ হলে বিচারক আলেক্সান্দ্রে দে মোরেস জরিমানা পাশাপাশি ব্রাজিলে প্ল্যাটফর্মটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমনকি দেশটির এক্স ব্যবহারকারীরা বিকল্প কোনো উপায়ে প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যাক্সেস করলে মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হবে বলেও জানায় আদালত।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্রাজিলে এক্স ও স্টারলিংকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয় এবং জরিমানা হিসেবে ৩.৩ মিলিয়ন ডলার (৩৩ কোটি ডলার) আদায় করে নেয় সরকার।
সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ
ব্রাজিলে এক্স-এর অপারেশন নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাস্কের প্রতিষ্ঠান আদালতের নির্দেশ অনুসরণ করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এক্স তদন্তাধীন থাকা বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে। অতঃপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটিতে নিজেদের অপারেশন শুরু করার আর্জি জানায় তাঁরা।
তবে বিচারক সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে এক্স-কে জানায় ৫.২৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানার অর্থ তাঁদের বকেয়া রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হলে তাঁদেরকে প্রথমে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
সে অনুযায়ী সকল বকেয়া জরিমানা পরিশোধ করা হয়েছে জানিয়ে ব্রাজিলে তাঁদের কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি প্রার্থনা করে শুক্রবার নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানায় এক্স। অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিচারক আলেক্সান্দ্রে দে মোরেস এক্স-এর আইনজীবীদেরকে সঠিক ব্যাংকে জরিমানার বকেয়া অর্থ পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বকেয়া অর্থ সঠিক ব্যাংকে প্রদানের পরই প্রসিকিউটর জেনারেল এক্স-এর আর্জি বিবেচনা করে উক্ত বিষয়ে তাঁর রায় জানাবে বলে জানিয়েছে আদালত।
যা বলছে এক্স
মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এক্স অবশ্য ভুল ব্যাংকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। শুক্রবার বিচারক মোরেস তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পরেও এক্স-এর আইনজীবীরা আদালতে নিজেদের সার্ভিস শুরু করার অনুমতি চেয়ে অনুরোধ জানায়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য প্রসিকিউটর জেনারেলের সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না এক্স-কে প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবীদের দলটি।