‘বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে’- এমন দাবি জানিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ নিজেদের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচার করেছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রপাগাণ্ডার মেশিন হিসেবে পরিচিত ভারতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো। এরই ফলশ্রুতিতে গুজব প্রবণ বিশ্বের ৩৪টি দেশের মধ্যে শীর্ষে ওঠে এসেছে ভারতের নাম।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যাসায়ী এবং সরকারি আমলাসহ প্রায় দেড় হাজার বিশেষজ্ঞের সত্যায়নের ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য দিয়েছে স্ট্যাটাস্টিকা। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গত ৪-৯ অক্টোবরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ইনফোগ্রাফিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে ২ নভেম্বর আরটি ইন্ডিয়া’র এক্স হ্যান্ডেলে প্রচারিত ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মুসলিম কর্তৃক হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবি করা হলেও ভিডিওটি মূলত ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুর গ্রামে প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ‘রঘুব সাথী’ নামক একটি ভারতীয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ নভেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত পোস্টে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ‘সুলতানপুর কালীমাতা নিরঞ্জন’ উল্লেখ করা হয়। এর সূত্রে অনুসন্ধানে ‘dey_raghu’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ নভেম্বরই প্রচারিত আরেকটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে বলা হয়, সুতলানপুর ১২ বছর অন্তর কালীমাতা নিরঞ্জনের দৃশ্য এটি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ‘সুলতানপুর কিরনময়ী পাঠাগার’ নামক একটি ভারতীয় পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পেজ পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বর ‘১২ বছর অন্তরঐতিহ্যের কালীমাতা নিরঞ্জন ২০২৪’ আয়োজন করে ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুরের কিরণময়ী পাঠাগার এবং সুলতানপুর গ্রামবাসীবৃন্দ।
এছাড়া, পল্লী দামোদর নামক একটি ভারতীয় স্থানীয় গণমাধ্যমের পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খণ্ডঘোষ সুলতানপুরের মণ্ডলবাড়িতে দীর্ঘ ১২ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় কালীমাতা নিরঞ্জন।
সুতরাং, ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্যকে বাংলাদেশে মুসলিম কর্তৃক হিন্দুদের মন্দিরে হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।