প্রযুক্তি দুনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন চলে আসছিল যে টেক জায়ান্ট অ্যাপল ফোল্ডেবল আইফোন নিয়ে কাজ করছে। আর তা হতে পারে ক্ল্যামশেল ডিজাইনে, অর্থাৎ স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপের মতো। এটি বাজারে আসতে পারে ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। তবে ডিসপ্লে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ রস ইয়ং বলছেন ভিন্ন কথা। সম্ভাব্য ফোল্ডেবল আইফোনটি ক্ল্যামশেল ডিজাইনে হবে না।
ইয়ংয়ের তথ্যমতে, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিরিজের ফোনে যেভাবে বইয়ের মতো করে ভাঁজ করা যায়, অ্যাপলের প্রথম ফোল্ডেবল ফোনে সে রকম বড় আকারের ডিসপ্লে থাকবে। গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিরিজের বড় ডিসপ্লের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যাপলও গ্রাহকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বড় ডিসপ্লের দিকেই ঝুঁকবে।
ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপল ঠিক কোন সময় প্রবেশ করবে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত কয়েক বছরে বাজারটিতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও ২০২৩ ও ২০২৪ সাল ছিল কিছুটা ধীরগতির। সেজন্য অ্যাপলের আগমন বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে। এতে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট হতে পারে। পাশাপাশি নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করতে পারে।
দুর্দান্ত নকশা ও সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার কারণে অ্যাপল বরাবরই প্রশংসিত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় ডিসপ্লের ফোল্ডেবল ফোনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নকশা ও সফটওয়্যার ফিচারে মুনশিয়ানা দেখাতে পারবে। এর মাধ্যমে বর্তমানে বাজারে পাওয়া ফোল্ডেবল ফোনগুলোর চেয়েও ভালো অভিজ্ঞতা দেয়ার সুযোগ রয়েছে অ্যাপলের। তাছাড়া ফোল্ডেবল ফোনের দাম বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফাতেও অবদান রাখতে পারবে।
বর্তমানে ফোল্ডেবল ফোনবাজারের নেতৃত্বে রয়েছে স্যামসাং, গুগল, ওয়ানপ্লাস ও হুয়াওয়ে। প্রতিটি ব্র্যান্ড নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছে ফিচার আরো সমৃদ্ধ করতে। তবে বাজার জনপ্রিয়তায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দাম। ফোনগুলোর দাম বেশি হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতা এখনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস বলছে, ফোল্ডেবল ফোনের বাজারে অ্যাপল প্রবেশের কারণে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এর পরের বছর থেকে বাজারের প্রবৃদ্ধি হবে ২০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির জন্য সবকিছু যদি অনুকূলে থাকে তাহলে এটিই হবে তাদের বড় পদক্ষেপ এবং বাজার প্রবণতায় আসবে বড় ধরনের পরিবর্তন। এদিকে আগামী বছর আসতে যাচ্ছে আইফোন ১৭ সিরিজ। এতে থাকবে বহুল প্রত্যাশিত আইফোন ১৭ এয়ার। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ফোনটি হবে সবচেয়ে পাতলা আইফোন, যা স্লিক ও মডার্ন ডিজাইনের নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
এদিকে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজারে বড় কোম্পানিগুলো নতুন ট্রাই-ফোল্ড ডিজাইনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের হুয়াওয়ে মেট এক্সটি আলটিমেট এডিশন নামে বিশ্বের প্রথম ট্রাই-ফোল্ড স্মার্টফোন বাজারে আনে। এর পরই অ্যাপল ট্রিপল-ফোল্ডিং আইফোন নিয়ে কাজ করছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ছোট ডিভাইসে বড় পর্দা, হিঞ্জ মেকানিজমের (স্ক্রিন ফোল্ড করতে সাহায্য করে যে অংশ) অগ্রগতি, ফাইভজি নেটওয়ার্কের বিস্তার ও গবেষণা এবং উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগের কারণে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ছে। বাজার গবেষণা সংস্থা ‘বিজনেস রিসার্চ কোম্পানির’ মতে ২০২৮ সালের মধ্যে বৈশ্বিক ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজারমূল্য ৫ হাজার ৪৬৫ কোটি ডলারে পৌঁছবে, যেখানে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।