২০২৪ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী ১৫ কোটির বেশি আইফোন বিক্রি করেছে অ্যাপল। চতুর্থ প্রান্তিক নিয়ে বছরের মোট বিক্রির পরিমাণ পূর্ববর্তী সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্ম ডিমান্ডসেইজ।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আইফোন বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সাড়ে চার কোটি আর প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পাঁচ কোটির বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে টেক জায়ান্টটি। অন্যদিকে ২০২৩ সালে আইফোন বিক্রির সংখ্যা ২৩ কোটির বেশি।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, আইফোন শুধু যোগাযোগমাধ্যম থেকে পরিবর্তন হয়ে এখন উৎপাদনশীলতা ও বিনোদনের শক্তিশালী একটি টুল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ডিভাইসগুলো উন্নত ক্যামেরা কোয়ালিটর জন্য বেশ সুপরিচিত। এসব মিলিয়ে আইফোন কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আইওএসের ব্যবহার গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। ২০২৩ সালের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে ১৩৭ কোটি আইফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। এ সংখ্যা ১০ বছর আগে ছিল ১০ লাখের বেশি।
গবেষণা বলছে, সবচেয়ে বেশি আইফোন ব্যবহারকারী রয়েছে জাপানে, যা দেশটির মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর প্রায় ৭০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় আইফোনের উৎপত্তিস্থল যুক্তরাষ্ট্রে। এ দেশে কুপারটিনোভিত্তিক টেক জায়ান্টটির স্মার্টফোন ব্যবহার করছে সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট টেকনোলজি মার্কেট রিসার্চের গ্লোবাল হ্যান্ডসেট মডেল সেলস ট্র্যাকার বলেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত স্মার্টফোনের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে আইফোন ১৫। তালিকার পরবর্তী দুটি স্থানও অ্যাপলের, যথাক্রমে আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স ও আইফোন ১৫ প্রো। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে আয় ছাড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি ডলার, সব মিলিয়ে কোম্পানিটির জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আয় পৌঁছেছে ৯ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে। অ্যাপলের আয়ের এ প্রতিবেদন ওয়াল স্ট্রিটের ৯ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি।
অ্যাপলের প্রতিবেদন বলছে, তৃতীয় প্রান্তিকে আইফোন ১৬-এর চাহিদা ছিল জোরালো, তবে চীনে ডিভাসটির বিক্রি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। চীনের স্মার্টফোন বাজারে সবচেয়ে বড় বিদেশী ফোন নির্মাতা হিসেবে অ্যাপল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কোম্পানি। চীনের বাজারে বিদেশী ব্র্যান্ডের ফোন বিক্রির সামগ্রিক পরিসংখ্যানকে সরাসরি প্রভাবিত করে অ্যাপলের পারফরম্যান্স।
এদিকে একাধিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ফোল্ডেবল ডিজাইন নিয়ে ভাঁজযোগ্য ফোনের বাজারেও আসছে অ্যাপল। প্রযুক্তি দুনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন চলে আসছিল যে টেক জায়ান্টটি ফোল্ডেবল আইফোন নিয়ে কাজ করছে। তা হতে পারে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপের মতো ক্ল্যামশেল ডিজাইনে। এটি বাজারে ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আসতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে। তবে ডিসপ্লে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ রস ইয়ং বলছেন, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিরিজের ফোনে যেভাবে বইয়ের মতো করে ভাঁজ করা যায়, অ্যাপলের প্রথম ফোল্ডেবল ফোনে সে রকম বড় আকারের ডিসপ্লে থাকবে। গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিরিজের বড় ডিসপ্লের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যাপলও গ্রাহকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বড় ডিসপ্লের দিকেই ঝুঁকবে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ফোল্ডেবল ফোনের বাজারে অ্যাপল প্রবেশের কারণে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলেও প্রত্যাশা তাদের।