বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। উদ্যোক্তারা নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান নিয়ে আসছেন, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রাখে। তবে এই প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করতে এবং একটি টেকসই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে “বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম শক্তিশালীকরণে মিডিয়া পার্টনারশিপের ভূমিকা” শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) আয়োজিত এই সেমিনারে স্টার্টআপ ও মিডিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.কে.এম আমিরুল ইসলাম এনডিসি সেমিনারের চেয়ার হিসেবে বলেন, “সরকার ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য নীতি সহায়তা প্রদান করছে এবং মিডিয়া এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।” বিএইচটিপিএ-এর ডিজিটাল এন্টারপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্ট (ডিইআইইডি) প্রকল্প দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ সহায়তা এবং নেটওয়ার্কিং সুবিধা প্রদান করছে। এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের ১০৫০ জন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিং প্রদান করা হচ্ছে।
অনুসঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজম (সিটিজে)-এর সভাপতি হাসান জাকির বলেন, “বাংলাদেশের স্টার্টআপ কার্যক্রম ১২ বছরের বেশি সময় ধরে চললেও এখনো যথাযথ ইকোসিস্টেম তৈরি হয়নি। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে আমাদের অবস্থান উন্নত করতে স্টার্টআপ এবং মিডিয়াকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।”
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য মিডিয়া তিনটি মূল ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে—
সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প তুলে ধরা: উদ্যোক্তাদের সাফল্যগাঁথা যেমন প্রচারিত হওয়া উচিত, তেমনি ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের জন্য শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি করা যেতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা মূলত মিডিয়ার মাধ্যমেই নতুন স্টার্টআপ সম্পর্কে জানতে পারেন।
সচেতনতা ও নীতিনির্ধারণে সহায়তা: গণমাধ্যম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে নীতিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিসেস হোসনে ফেরদৌস সুমী বলেন, “বাংলাদেশি স্টার্টআপ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় স্টার্টআপদের বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে মিডিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রোগ্রাম হোস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জনাব মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার। প্রকল্পের অধীনে স্টার্টআপদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন তিনি।
ফিউচার স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা রুহুল কাদের, এবং ওয়াই ওয়াই ভেঞ্চারসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ফারিহা তাবাসসুম হকসহ দেশের খ্যাতনামা স্টার্টআপ প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। তারা বলেন, “মিডিয়ার মাধ্যমে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন হলে নতুন উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হবেন এবং দেশীয় স্টার্টআপগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পাবে।”