আজ (২৫ মার্চ) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সাথে দু’টি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এ চুক্তির আওতায় জাপানিজ বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) ঋণের মাধ্যমে ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ে ডেভেলপমেন্ট ও মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্পের (অষ্টম কিস্তি) জন্য সবমিলিয়ে ৮৫,৮১৯ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (৬,৭০০ কোটি টাকা) প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে, প্রথম প্রকল্পে ঋণ দেয়া হবে ২৮,৬৯৯ মিলিয়ন ইয়েন ও দ্বিতীয় প্রকল্পে ৫৭,১২০ মিলিয়ন ইয়েন।
ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমাহিদে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি।
ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় একটি ফুড সেফটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ভবন, খাদ্য পরীক্ষাগার কক্ষ, প্রশিক্ষণ ভবন, অফিস ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে খাদ্য নিরাপত্তা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যৌথভাবে কাজ করবে জাইকা ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পখাতের প্রসার, শিল্পখাতকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা হবে। এই প্রকল্পের বার্ষিক সুদের হার নির্মাণ কাজের জন্য ১.৮৫ শতাংশ ও পরামর্শক সেবার জন্য ০.৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছরের প্রেস পিরিয়ড সহ ৩০ বছর।
অন্যদিকে, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প (অষ্টম কিস্তি) দেশের জন্য র্নিভরযোগ্য বেইস লোড বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি উৎস বৈচিত্র্যকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ সক্ষমতা সম্পন্ন আল্ট্রা সুপারক্রিটিকাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, সড়ক ও সেতু। এছাড়া, এ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর (ড্রাফট: ১৮.৫ মিটার) নির্মিত হবে, যা দেশের জ্বালানি ও বাণিজ্য অবকাঠামোকে শক্তিশালী করবে। প্রকল্পটি স্থানীয় কমিউনিটির জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা, স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, কমিউনিটি রাস্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবিকা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের অষ্টম কিস্তি ঋণের বার্ষিক সুদের হার নির্মাণ কাজ ও যন্ত্রপাতির জন্য ১.৯৫ শতাংশ ও পরামর্শক সেবার জন্য ০.৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ মেয়াদ ৩০ বছর। জাইকা এ প্রকল্পের জন্য ট্রাঞ্চ আট পর্যন্ত মোট ৭১২,৪৩০ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন অর্থায়ন করেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমাহিদে বলেন, “আজ আমরা দুইটি বৈচিত্র্যময় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছি। তবে, এই দুইটি প্রকল্পের লক্ষ্যই হলো সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তা করা।”