৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি সই করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আগামী ২০-২৫ বছর পর এর সুফল পাওয়া যাবে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
এর আগে সামিটের সাইডলাইনে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতায় সই করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রলায়ের সিনিয়র সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন এবং নাসার পক্ষে সমঝোতায় সই করেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
সমঝোতা সই অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা দেন নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক মিসেস জ্যানেট পেট্রো। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন— বিডা ও বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি, ভারপ্রাপ্ত ইকোনমিক ইউনিট প্রধান জেমস এস গার্ডিনার, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান স্পার্সো’র চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংইয়ের মহাপরিচালক এ.এফ.এম. জাহিদ-উল-ইসলাম, পরিচালক মো. শফিউল আলম, বিডা’র হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি প্রমুখ।
নাসার সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ একটা প্রজন্ম শুধু মহাকাশ গবেষক হবেন, যারা হয়তো মহাকাশে বসবাস করবেন। এই ভবিষ্যৎ আউটলুকের ওপর নির্ভর করে একটা যৌথ উদ্যোগ চালু হয়েছিল, যেখানে অনেকগুলো দেশ অংশগ্রহণ করেছে। আমরা আজকে নাসার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে ৫৪তম দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করলাম। ৫৩টা দেশ ইতোমধ্যে নাসার সঙ্গে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করছে। এই যে সই করে আমরা যুক্ত হলাম, এর লাভ দেখতে হলে আমাদেরকে ২০-২৫ বছর সামনে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণদের নিয়ে আমরা কথা বলি, তারা কিন্তু গ্লোবাল। প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন— বাচ্চারা কী হতে চায়, তাহলে ৫০ শতাংশই বলবে যে, তারা নভোচারী হতে চায়। তো বাংলাদেশি নভোচারী আমরা কবে দেখবো। আমার মুল লক্ষ্য যদি হয়— মহাকাশে আমরা বাংলাদেশি নভোচারী পাঠাবো, তাহলে আমাদের এ ধরনের একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সম্মত হলাম যে, আমরা নাসার সঙ্গে এবং বাকি ৫৩ দেশের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা করবো, একসঙ্গে কাজ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে মহাকাশ গবেষণা এজেন্সি আছে, তারা নাসার সঙ্গে কাজ করবে। ইতোমধ্যে কিছু বিজ্ঞানী কাজ করেন। আমরা এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজকে থেকে ১০ বছর পরে মহাকাশে বাংলাদেশ একটা অবস্থান নিতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।’
এদিকে বিনিয়োগ সম্মেলন শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পজিটিভ বাংলাদেশ ইমেজের স্মৃতি নিয়ে ফিরে যাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিডা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চলতি বছরেই ১০০ কোটি ডলারে বিনিয়োগে আগ্রহী নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। শিগগিরই নতুন জ্বালানি নীতি প্রকাশ করবে সরকার।
এর আগে প্রথম দিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাংয়ের সম্ভাব্য ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভেস্তে গেছে জানিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেছিলেন, “বিগত সরকার যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্যামসাংসহ বহু সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে। স্যামসাং চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু জমির মিউটেশন জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় তারা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে।”
চৌধুরী আশিকের দাবি, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুই মাসে সেই জমি সমস্যার সমাধান করেছে, যা পূর্ববর্তী সরকার দশ বছরেও করতে পারেনি। “আমরা সদিচ্ছা দিয়ে প্রমাণ করেছি—চাইলেই সম্ভব,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, বিডায় দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কেইপিজেড প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় কিহাক সাং আফসোস করে বলেন, “আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। কিন্তু জমির কাগজ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে স্যামসাং বিনিয়োগ থেকে সরে যায়।”