দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ বা তদুর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জনেরই রয়েছে একটি করে মোবাইল ফোন। এদের মধ্যে ৭২ শতাংশের হাতে আছে স্মার্টফোন। এর মধ্যে গ্রামের ৬৯ শতাংশ এবং শহরের ৭৯ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মাত্র ৫২ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে দিনে একবার হলেও ইন্টারনেটে যুক্ত হন ৭৫ শতাংশ। সপ্তাহে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১৮ শতাংশ। সপ্তাহে এক বারও ব্যবহার না করাদের হার ৬ শতাংশ।
এই হিসাবটা চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ( অক্টোবর-ডিসেম্বর)। গত ৭ এপ্রিল এই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আইসিটির প্রয়োগ ও ব্যবহার–বিষয়ক ত্রৈমাসিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগের প্রান্তিকে জুলাই–সেপ্টেম্বর মাসে দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী পরিবার ছিল ৭০ শতাংশ। সেই হিসেবে এক প্রান্তিতে দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বেড়েছে ২ শতাংশ। তবে আগের প্রান্তিকে ব্যক্তি পর্যায়ে ৪৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও এই প্রান্তিকে তা ৪৭ শতাংশের বেশি বাড়তে পারেনি।
পরিসংখ্যান বলছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের ৯৯ শতাংশ বৈদ্যুতিক সংযোগে টেলিভিশন দেখেন ৬৪ শতাংশ; রেডিও শোনেন ১৫ শাতংশ এবং কম্পিউটার ব্যবহার করেন ৯ শতাংশ। ৩ শতাংশের কাছে আছে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট পিসি।
জরিপের তথ্য বলছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহার খুব বেশি বাড়েনি। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শহর–গ্রামনির্বিশেষে পরিবার (খানা) পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ছিল ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় অর্ধেক পরিবার এখনো সরাসরি ইন্টারনেট–সেবার বাইরে রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবার শহরের তুলনায় গ্রামের পরিবারগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শহরের ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামে এই হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও কম। শহর-গ্রাম মিলিয়ে সার্বিকভাবে এই হার প্রায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশে জেলাভিত্তিক ব্যক্তি ও খানাপর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে পরিচালিত এই জরিপে দেশের ২ হাজার ৫৬৮টি এলাকার ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিবিএস জানিয়েছে, জরিপে শহর ও গ্রাম এলাকায় খানাপর্যায়ে পাঁচ বছর ও তার বেশি বয়সীদের থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও এ–সংক্রান্ত উপকরণ ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে একদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে খানার জনতাত্ত্বিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা জানা যাবে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও এসডিজি ট্র্যাকারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। জরিপে যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে—এলাকাভেদে খানাপর্যায়ে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ব্যক্তিপর্যায়ে মুঠোফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার, মুঠোফোনের মালিকানা প্রভৃতি বিষয়।
এর মধ্যে গ্রামের ৩.৮ শতাংশ এবং শহরের ২০.৭ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ২.৯ শতাংশ ডেস্কটপ এবং ৩.১ শতাংশ হারে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট পিসি ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে শহরে ৭ শতাংশ ল্যাপটপ এবং ৭.৮ শতাংশ ট্যাবলেট পিসি ব্যবহার করেন। ব্যক্তিগত ভাবে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এদের মধ্যে শহরের ৭৭.১ শতাংশ এবং গ্রামের ৭৪.১ শতাংশ দিনে কমপক্ষে একবার ইন্টারনেটে যুক্ত হন। প্রতিদিন ব্যবহার না করলেও গ্রামের ১৯ শতাংশ এবং শহরের ১৭.৬ শতাংশ সপ্তাহে একবার কিংবা এক বারেরও কম ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার গ্রামে ৭ শতাংশ এবং শহরে ৫.৩ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডকেই আইটিইউ স্বীকৃত হলেও জরিপের প্রকাশিত ১১টি ইন্ডিকেটরের মধ্যে স্বতন্ত্র্যভাবে সেই হিসাবটি প্রকাশ করা হয়নি।