পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন বা প্রক্সি- পদ্ধতি যাই হোক না কেন প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করে ভোটার হতে হবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের। আর ভোটিং পদ্ধতি কী হবে তা জানা যাবে আগামী ২০ এ্রপ্রিলের পর। এর আগেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি বলেছেন, পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। তিনটি পদ্ধতি নিয়ে তিনটি টিম কাজ করবে। আগামী ২০ তারিখের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এ প্রত্যাশা ধারণ করে। তাই তারা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছেন, ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অনুশ্রিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করা হয়েছে। এগুলো হলো- পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে।
কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় ১০টি টিম তাদের পরামর্শ উপস্থাপন করেছে। এসময় ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রযুক্তিবিদদের সেই পরামর্শ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা দেখেছি। আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করিনা কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতিসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীদের প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি পদ্ধতি নয়, বরং মিশ্র পদ্ধতি করতে হবে। কেননা, একেক দেশের পরিস্থিতি একেক রকম। সব পদ্ধতির সফলতা ও দুর্বলতা আছে। সব পদ্ধতির জন্য মক টেস্টিং প্রয়োজন হবে। সম্ভবত, সব পদ্ধতির জন্যই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে করতে হবে। এটা অনেক দেশ করছে।
তিনি আরো বলেন, পরামর্শক কমিটি তিনটি পদ্ধতির সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কী করে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবে। এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসবো। ইনশাআল্লাহ এবার প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে পারবো।
এসময় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কাগজ কেনাকাটা ও মুদ্রণের কাজ ভোটের আগে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে করার প্রস্তুতি বিষয় তুলে ধরেন ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব।
সচিব বলেন, “মূলত পেপার প্রকিউরমেন্ট থেকে প্রিন্টিং পর্যন্ত সময়সীমা কতটুকু লাগে। উনারা বলেছেন যে, তিন মাস থেকে চার মাস সময় লাগে। যেভাবে ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশন হবে সেভাবে (এগোবে)। নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের সিডিউল সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটা হবে; তখন যেন আমাদের ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশনটা থাকে।”
নতুন নিবন্ধন নিয়ে সাংবাদিকদের আখতার আহমেদ বলেছেন, নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কিনা, তা কমিশনের সিদ্ধান্ত। এখনও ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদনের সময় আছে। নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, সংস্কারে ব্যাপারে যেভাবে সরকার থেকে পদ্ধতি নেওয়া হবে সেভাবে হবে। তবে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার পাঠানোর জন্য সরকার থেকে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মতামত পাঠাবো।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, ৫ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকাসহ অনেক কিছু মুদ্রণ করতে হয়।